দীর্ঘ এক রাজনৈতিক পথচলার পরে, আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ফেনীর আলোচিত ছাত্রনেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম (Muhaimin Tajim) আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৬ জুলাই) সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত সেই স্ট্যাটাসে মুহাইমিন তাজিম স্মরণ করিয়ে দেন এক বছর আগের সেই ঐতিহাসিক ৬ জুলাইয়ের কথা—যেদিন শুরু হয়েছিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। ফেনীসহ সারা দেশের মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছিল, প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়েছিল, তা ছিল, তাঁর ভাষায়, “একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত”।
তিনি লেখেন, “এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে এক কণ্ঠে, এক হৃদয়ে পথ চলতে পেরে আমি গর্বিত।” তাঁর মতে, আন্দোলনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ এবং বিজয় সম্ভব হয়েছে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে।
তবে সমন্বয়কের পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নতুন নয়—অনেক আগেই তা নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আন্দোলনের ‘স্পিরিট’ টিকিয়ে রাখা, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে সক্রিয় থাকা এবং সংস্কার-প্রয়াসের ধারাবাহিকতায় তিনি কিছুটা বিলম্বিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মুহাইমিন তাজিম বলেন, “আন্দোলনের পর সমন্বয়কের পথচলা কঠিন ছিল। অনেক সিনিয়র, জুনিয়র, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের স্নেহ-পরামর্শ পেয়ে এগিয়ে চলেছি। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।”
তিনি আরও জানান, এই মাঠে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা ছিল শিখনপ্রবণ। নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে তিনি বলেন, “এই মাঠে এসে আমি বহুবার ব্যবহৃত হয়েছি—কখনো নিজের অজান্তে, কখনো অনভিজ্ঞতায়। বুঝেছি, কেউই পূর্ণাঙ্গ সাধু নন। ইমাম, শিক্ষক, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা কথিত জনদরদি—সবারই কিছু না কিছু বিচ্যুতি আছে।”
নিজের রাজনৈতিক ভুল নিয়েও সরল স্বীকারোক্তি রয়েছে পোস্টে। “কখনো সিদ্ধান্তে, কখনো অবস্থানে, কখনো নীরব থাকার মাধ্যমে আমি ভুল করেছি। কারও বিশ্বাসে ফাটল ধরলে আমি দুঃখিত,”—লিখেছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজনীতি তাঁর কাছে এক চলমান শিক্ষা। তাই বিদায়কে তিনি বিচ্ছেদ হিসেবে দেখছেন না, বরং নতুন যাত্রার শুরু। “আমি থাকবো আপনাদের মধ্যেই—শুধু পদে নয়, বিশ্বাসে,”—এই কথায় ফুটে উঠেছে তাঁর ভবিষ্যতের অঙ্গীকার।
পোস্টটির প্রতিক্রিয়ায় শুধু ফেনী নয়, সারা দেশ থেকেই উঠে এসেছে নানা প্রতিক্রিয়া, প্রশংসা ও আবেগময় মন্তব্য। বিদায় নয়, যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।