ওয়াশিংটনে আলোচনার ফল শূন্য, ১ আগস্ট থেকেই বহাল থাকছে ট্রাম্পের ৩৫% শুল্ক

তিন দিনের ম্যারাথন আলোচনার পরও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ (Bangladesh) ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য সংলাপে কোনো ধরনের সমঝোতা বা ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আরোপিত ৩৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক বহাল থাকছে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

মানবজমিনকে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এ বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হলেও নির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। তবুও আলোচনার প্রক্রিয়া একে ‘ব্যর্থ’ বলার আগে সরকারিভাবে কিছুটা সংযত মনোভাব দেখানো হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “কূটনীতিতে এমন আলোচনায় তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া খুবই দুর্লভ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে টেবিলে বসে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের বক্তব্য টিকিয়ে রাখাটাই বড় সাফল্য।”

তিন দিনের আলোচনায় ঢাকা তার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দাবি বিশ্ব বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাংলাদেশ সেগুলো একতরফাভাবে মেনে নেয়নি। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র যদি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে—এমন একটি শর্তে একমত হতে পারেনি ঢাকা।

সূত্র বলছে, আলোচনার টেবিলে দুই পক্ষই নমনীয়তা দেখিয়েছে। বেশ কিছু ইস্যুতে তারা কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছালেও, শেষ পর্যন্ত চুক্তির পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেগুনবাগিচার ভাষ্যমতে, এই আলোচনা ছিল চলমান প্রক্রিয়ার অংশ, ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল বা সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আবারও বসবে উভয়পক্ষ।

এই তিনদিনের ওয়াশিংটন বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকার পক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডি এম সালাউদ্দিন মাহমুদ। এছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের প্রবেশে যে বাড়তি শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে, সেটি বহাল থাকায় দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে পোশাক খাত নতুন চাপের মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।

সরকার সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, যতটা সম্ভব কূটনৈতিক চাপ ও নরম আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া শুল্কই আপাতত বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *