নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের যে যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এনসিপি

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করা নতুন ১৪৪টি রাজনৈতিক দলের কেউই প্রাথমিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কমিশন জানায়, কোনো দলই আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় শর্ত শতভাগ পূরণ করতে পারেনি। সেই সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens Party)–সহ সব দলকেই ১৫ দিনের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইসির পর্যবেক্ষণ ও ত্রুটি

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ (Akhtar Ahmed) জানিয়েছেন, নিবন্ধনের জন্য যেসব আইনগত ও সাংগঠনিক তথ্য প্রয়োজন, তার ঘাটতি রয়েছে সব দলের আবেদনেই। এ কারণে প্রতিটি দলকে ১৫ দিনের সময় দিয়ে সংশোধনী জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষভাবে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম (Md. Nahid Islam)-কে পাঠানো চিঠিতে দলটির আবেদনে একাধিক ত্রুটির উল্লেখ রয়েছে। এসব ত্রুটির মধ্যে রয়েছে—
– কার্যকর জেলা দপ্তরের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও ঠিকানা জমা না দেওয়া
– ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম না থাকা
– ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক (২০০ জন) ভোটারের স্বাক্ষর না থাকা
– ইটনা ও হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা অনুপস্থিত
– ফরম-১-এ তহবিলের পরিমাণ ও উৎস সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করা
– কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তপত্রে স্বাক্ষরের অভাব

গঠনতন্ত্র ও প্রার্থীবাছাই পদ্ধতির ঘাটতি

ইসি আরও জানায়, এনসিপির গঠনতন্ত্রে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান নেই। যেমন: ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলা কমিটির প্যানেল থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের নিয়মাবলি অনুপস্থিত।

এ ছাড়া, দলের পক্ষ থেকে দাখিলকৃত কোনো দলিলে সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় বা আন্তর্জাতিক অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি দলে নেই—এই মর্মে প্রত্যয়নপত্রও জমা দেওয়া হয়নি।

ভোটার সদস্য অন্তর্ভুক্তির নানা অনিয়ম

চিঠিতে বলা হয়, কিছু উপজেলায় ভোটার সদস্য ২০০ জনের কম। আবার, কিছু উপজেলায় ভিন্ন এলাকার ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে একই ভোটার একাধিকবার তালিকাভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ডিমলা উপজেলায় (Dimla Upazila) প্রায় ২০ জন সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জমা দেওয়া হয়নি।

কম সদস্যসংখ্যার ২৫টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে:
– নলছিটি (১৭৫ জন)
– হবিগঞ্জ সদর (১৮১ জন)
– পলাশ (১৯৩ জন)
– কালিয়া (১৮৪ জন)
– জলঢাকা (১৫৮ জন)
– সোনাগাজী (১৮৮ জন)
– কসবা (১৩৬ জন)
– মাদারগঞ্জ (১০৮ জন)
– সরিষাবাড়ী (১৭৬ জন)
– ধনবাড়ী (১৮৫ জন)
– গংগাচড়া (১৬৩ জন)
– ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর (১৬৯ জন)
– মধুপুর (১৪৭ জন)
– আজমিরীগঞ্জ (১৮৬ জন)
– ধামরাই (১৭৪ জন)
– কর্ণফুলী (১৫৭ জন)
– সাভার (১৩০ জন)
– ভেদরগঞ্জ (১৪৯ জন)
– মনোহরগঞ্জ (১৪৬ জন)
– উত্তরা পশ্চিম (১৬৯ জন)
– ঈশ্বরগঞ্জ (১৯৫ জন)
– বনানী (১৯৪ জন)
– বাঁশখালী (১৩৬ জন)
– পবা (১৮০ জন)
– ডিমলা (১৯৪ জন)

পরবর্তী পদক্ষেপ

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। পরে এনসিপিসহ ৪৬ দলের অনুরোধে সময় বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়।

চূড়ান্তভাবে, মোট ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে। কমিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে প্রত্যেক দলকে ত্রুটি সংশোধনের চিঠি পাঠানো হচ্ছে। সংশোধিত তথ্য সময়মতো না জমা দিলে সংশ্লিষ্ট দল নিবন্ধনের অযোগ্য বিবেচিত হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *