বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি কার্যকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও জনতার দলের (Jonotar Dal) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল (Shamim Kamal)। তার মতে, এই পদ্ধতি শুধুমাত্র পরিপক্ব ও স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশেই সঠিকভাবে কার্যকর হতে পারে। বাংলাদেশে প্রচলিত ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতির মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জনতার দলের বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শামীম কামাল বলেন, “আমাদের দেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাই চলমান সংসদের জন্য যথাযথ। তবে যদি কখনো দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠিত হয়, তাহলে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চ কক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে।” তিনি জানান, এতে করে সকল রাজনৈতিক দলের অন্তত প্রতীকী অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লব নিয়ে মানুষের গভীর প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা এক গভীর হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে। সরকার যেসব সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল, তার কোনোটিই যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি।”
সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, বড় দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্যের যে আশা করা হয়েছিল, বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি দেখা যাচ্ছে না। “ছোটখাটো কিছু উদ্যোগ ছাড়া কমিশন সংস্কার নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার মতো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। মনে হচ্ছে, কমিশন আর বেশি দূর এগুতে পারবে না,” বলেন তিনি।
বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কেও শামীম কামালের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “বিচার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অল্প সময়ের মধ্যে এর সমাপ্তি সম্ভব নয়। তবে সরকারের উচিত কিছু ‘টোকেন’ বিচার সম্পন্ন করা, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর। জনগণ আজ অতিষ্ঠ, তারা ষড়যন্ত্র ও অচলাবস্থা থেকে মুক্তি চায়। আপাতত সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে সরকারের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌশল।”
অভ্যুত্থানের মামলাগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, মামলার টার্গেট আসলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নন, বরং ধনী ও প্রভাবশালীরা। তার ভাষায়, “একটি মামলার আসামির তালিকায় ৭০-৮০ জনের নাম, আবার বাড়িয়ে ২০০ জন করে দেয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজরা যাদের কাছে টাকা আছে, তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মামলা দিচ্ছে।”
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমার পরিচিত একজন হজ পালনে গিয়ে জামিন নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন আবার নতুন করে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।”
রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে রুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে একটি শক্তিশালী দল চাচ্ছে কেউ যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের দিয়ে আমরা দল গঠন করতে চাই। চোর, ডাকাত, অর্থপাচারকারী, মামলাবাজ, চাঁদাবাজদের কোনো স্থান জনতার দলে নেই।”
তিনি দাবি করেন, বর্তমানে বহু যোগ্য মানুষ তাদের দলে আসতে আগ্রহী হলেও মামলার ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। “রংপুর বিভাগে আমাদের অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই মঞ্চে আসতে চাচ্ছেন না।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাবও তুলে ধরেন জনতার দলপ্রধান। “দেশে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কেউ স্বাধীনভাবে নির্বাচনমুখী হতে পারছে না।”
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মুখপাত্র ও মুখ্য সমন্বয়ক মেজর (অব.) ডেল এইচ খান। আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুবুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, কর্নেল (অব.) আবুল কালাম মোঃ জাকি, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব মেজর (অব.) জাকির হোসেন এবং সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেজর (অব.) বদরুল আলম সিদ্দিকী।
সভায় রংপুর বিভাগের আটটি জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।