সরকার গঠন করলে ১৮ মাসে এক কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) জানিয়েছেন, তাদের দল সরকার গঠন করলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। এই প্রতিশ্রুতির পেছনে মূল লক্ষ্য হিসেবে তিনি দেশের আইটি খাতকে তুলে ধরেছেন, যা বহু বছর ধরে অবহেলিত হলেও এখন একটি বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আইটি-সম্পর্কিত যেসব ব্যবসা রয়েছে, আমরা ইতোমধ্যেই সেগুলোর ওপর কাজ শুরু করেছি। আমরা যদি আগামী দিনে সরকার গঠনের সুযোগ পাই, তাহলে প্রথম ১৮ মাসেই এক কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি করব।”

তিনি রাজনৈতিক সমালোচনার জবাবে বলেন, “অনেকে বলেন এটা রাজনৈতিক বক্তব্য। কিন্তু আমরা সেই রাজনৈতিক বক্তব্যই দিচ্ছি, যা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে আইটি খাত একটি বড় সম্ভাবনার জায়গা, যেখানে আমাদের দেশের বহু শিক্ষিত তরুণ-তরুণী কাজ করতে পারে। অথচ এতদিন এই খাতের যথাযথ ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছি আমরা, যেখানে ভারত অনেক আগেই এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।”

আইটি খাত নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি আরও বিস্তৃত। তিনি বলেন, “এই খাতটি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এখন আর কল সেন্টারে যাওয়ার দরকার নেই—ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই কাজ করা যায়। এমনকি যারা কথা বলতে পারে না, তারাও চ্যাটভিত্তিক আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হতে পারে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, “অনেক প্রতিবন্ধী ব্রেইল বা অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আউটসোর্সিং সেবায় যুক্ত হতে পারে। এটা শুধু তাদের ব্যক্তিগত উপার্জন নয়—এটি দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হিসেবেও কাজ করবে।”

গ্রামীণ অর্থনীতি ও হস্তশিল্প নিয়েও পরিকল্পনার কথা জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, “আমরা চাই গ্রামের কুমার, কামার, পাটশিল্পীরা ডিজাইন, প্রযুক্তি ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করুক। থাইল্যান্ডের ‘ওয়ান ভিলেজ ওয়ান প্রোডাক্ট’ মডেল অনুসরণ করে আমরা চাই প্রতিটি গ্রামে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের উন্নয়ন হোক, যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও বিক্রি করা যাবে।”

তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধীদেরও যুক্ত করা সম্ভব। এটি হবে একদিকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, অন্যদিকে মানবিক উন্নয়ন।”

প্রবেশগম্যতার সীমাবদ্ধতা নিয়েও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। “অবশ্যই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে,” বলেন আমীর খসরু, “কিন্তু তার মানে এই না যে কাজ শুরু করা যাবে না। এখন থেকেই আমাদের নীতিগত ও বাজেট কাঠামোয় প্রতিবন্ধীদের যুক্ত করতে হবে—তাদের আলাদা কিছু না করে, বরং সাধারণ ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

সবশেষে তিনি বলেন, “প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবন্ধীদের বিষয় যেন ‘স্পেশাল কেস’ হিসেবে না থেকে বরং সাধারণ কাঠামোর নিয়মিত কাজের মধ্যেই থাকে। বাজেটও আলাদা করে নয়, রুটিন বাজেটের অংশ হিসেবেই এটি পরিচালিত হওয়া উচিত। কারণ এখন প্রতিবন্ধী শিশুরাও স্কুলে যাচ্ছে, সামাজিক জীবনযাপন করছে—তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না করেও তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *