২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার ধারণা দিয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী (Javed Patwary)—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে। ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দিতে তিনি আরও দাবি করেন, “গুম, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের নির্দেশনা আসতো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।”
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun) বলেন, “এ ধরনের বহু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকির মাধ্যমে। পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থেকেও এসব বিষয়ে আমাকে জানানো হতো না।”
এই জবানবন্দি এখন একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠেছে।
‘জ্বীন’ ডিবি প্রধান, রাতে নিয়মিত বৈঠক
জবানবন্দিতে আরও উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে “জ্বীন” বলে ডাকতেন। কারণ, তার ওপর ছিল সরকারের ‘বিশেষ আস্থা’।
মামুন বলেন, “গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগপর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় রাতের বৈঠক হতো। সেখানে থাকতেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন, র্যাব মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।”
বৈঠকে জুলাই আন্দোলন মোকাবেলায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়া এবং মারণাস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা হতো বলেও জানান তিনি। “এ সবকিছুই শেখ হাসিনার অনুমোদনেই হতো,” বলেন মামুন।
আইজিপির জবানবন্দি অনুযায়ী, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুধু পুলিশ নয়, গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও উপদেষ্টার নির্দেশে কাজ করত। তিনি বলেন, “ব্যারিস্টার আরমানের টিএফআই সেলে আমিও একসময় বন্দি ছিলাম। সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি—অনেক কিছুই পুলিশের বাইরে পরিকল্পিত হতো।”
২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতেই ৫০% ব্যালট ভরার সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে ‘ভোট ডাকাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন মামুন। তার ভাষায়, “এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। এ ধারণা এসেছিল আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর কাছ থেকেই।”
সরকার পতনের পর গ্রেপ্তার
৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেপ্তার হন। এরপরেই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা গঠন হয়, যেখানে এ জবানবন্দি দেওয়া হয়।
এ মামলার প্রেক্ষাপটে দেশের নিরাপত্তা ও নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।