‘এক্সিট পলিসি’র সময় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এখন থেকেই তাদের ‘এক্সিট পলিসি’ বা নিষ্ক্রমণ কৌশল নিয়ে চিন্তা শুরু করা—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির (CPD) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (Dr. Debapriya Bhattacharya)। তিনি বলেন, “এই সরকারেরও এখন সময় এসেছে ঠিক করে দেখার, তারা কী অর্জন করে বিদায় নিতে চায়, এবং সেই বার্তাটি জাতির উদ্দেশ্যে স্পষ্টভাবে দেওয়া উচিত।”

বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “আমার পিসিমা একটা কথা শিখিয়েছিলেন—‘যতখানি খেতে পারবে, অতখানি কামড় দিও।’ সেই কথাটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি কতখানি সংস্কার করতে পারবেন এবং সেটা সময়মতো শেষ করতে পারবেন—এই সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।”

তিনি সতর্ক করে দেন, “যদি এই সীমা না মানা হয়, তাহলে ‘সংস্কার’ শব্দের আড়ালে আবার ‘অসংস্কারী’ কাজকর্ম দেখা দিতে পারে। একসময় ‘সংস্কারবাদী’ শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতো, এখন আবার ফিরে এসেছে। তবে এখন যাকে সংস্কারবাদী বলা হয়, কাল তাকে ফ্যাসিবাদী বলার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।”

তিন দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতার আলোকে দেবপ্রিয় বলেন, “জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং এক-এগারোর সরকারের প্রত্যেকেরই একটি বৈধ রাজনৈতিক নিষ্ক্রমণের পথ ছিল। তারা যে সময়টুকু ক্ষমতায় ছিলেন, তাতে সংসদীয় বৈধতা বা জনসমর্থনের একটি কাঠামো তৈরি করতে পেরেছিলেন।”

এরশাদ তার জাতীয় পার্টি দিয়ে অষ্টম সংশোধনী পর্যন্ত যেতে পেরেছিলেন, এবং জিয়াউর রহমানের দলও নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে কার্যকরভাবে ক্ষমতায় ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। “কিন্তু বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতের সরকার কতটা বৈধতা দেবে, সেটা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ,” বলেন দেবপ্রিয়।

তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট নয়। “এই সরকারকে আমরা কী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এনেছিলাম, তারা কীভাবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করছে এবং কী কী অসমাপ্ত কাজ রেখে যাচ্ছে—এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া দরকার।”

এই অবস্থায় একটি ‘এক্সিট টাস্ক রিপোর্ট’ তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা এখন সময়ের দাবি।”

সেমিনারে আরও অংশ নেন বিশিষ্ট গবেষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সীমাবদ্ধতা, দায়-দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *