লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় একটি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা (Shamim Mia)–এর স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির হাছেন আলীর (Hasen Ali) বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পরই দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
গত বৃহস্পতিবার ইউএনও স্বাক্ষরিত এক কারণ দর্শানোর নোটিশে জানানো হয়, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত হাছেন আলী সরকারি অনুমোদনের জন্য ১৩টি নিয়োগ ফাইল পাঠিয়েছেন, যেখানে ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ ইউএনও শামীম মিঞা জানিয়েছেন, তিনি এ সংক্রান্ত কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলের পর, চলতি বছরের ১৩ মে কলেজটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও হাছেন আলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে জানা গেছে, কলেজটি এমপিওভুক্ত হলেও অধ্যক্ষের পদ নিয়ে চারজন প্রার্থী ছিলেন এবং এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছিল। এর ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার ঘোষিত এমপিও সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিলেন।
কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নতুন কিছু ফাইল প্রেরণ করেন হাছেন আলী। ইউএনও বলেন, “আমি স্বাক্ষর করিনি, বরং আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে ফাইলগুলো প্রেরণ করা হয়েছে। আমি কলেজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। জবাব পাওয়ার পর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
উক্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য হাছেন আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এই অভিযোগের পরপরই বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা জামায়াত কার্যালয়ে দলটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, হাছেন আলীকে উপজেলা জামায়াতের আমির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম (Rafiqul Islam) দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা জামায়াতের আমির আবু তাহের (Abu Taher) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হাছেন আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে এর পেছনে কারণ কী, তা তিনি বলতে রাজি হননি। যদিও জামায়াতের কয়েকজন স্থানীয় নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে’ হাছেন আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে ও শিক্ষা অঙ্গনে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই ঘটনায় শুধু দল নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনজীবিকাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।