আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে, অর্থাৎ রমজান শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus), তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দেশটির লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে এ বিষয়ে ‘নোটিস অব মোশন’ উত্থাপন হয়, যেখানে ইউনূসের নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক রাশেদুল হক।
এর আগে, গত ২১ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ৪৩ জন সিনেটর ও এমপি ড. ইউনূসকে চিঠি দিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানান—নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, জুলাই অভ্যুত্থানের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তি।
নোটিসে নেতৃত্ব দেন সিনেটর অ্যাবিগেল বয়েড (এনএসডব্লিউ এমএলসি)। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের ১৭ বছরের স্বৈরশাসনের পতনের প্রথম বার্ষিকী—যা ‘মনসুন বিপ্লব’ নামে পরিচিত এক গণঅভ্যুত্থানের ফল। অনেকেই একে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, প্রথমটি ছিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
সিনেটর বয়েডের ভাষ্যমতে, ড. ইউনূস সম্প্রতি দেশের সামনে গণতান্ত্রিক সংস্কারের একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেবেন। ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্ব—সংস্কার, ন্যায়বিচার, এবং নির্বাচন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, এই প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হবে ক্ষমতা একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া, এবং নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
নোটিসে উল্লেখ করা হয়, ড. ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন—যেখানে ২৮ দফার প্রস্তাবে ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি নিশ্চিত করেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুতগতিতে চলছে। তাঁর মতে, গণতন্ত্র আপসের ভিত্তিতে পুনর্গঠন সম্ভব নয়; নির্বাচন রোডম্যাপের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সংস্কারও জরুরি।
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে আরও বলা হয়, পরিবর্তনকালীন এই সময়ে বাংলাদেশের গভীর কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সংস্কারের সদিচ্ছা প্রকাশ করলেও বহু প্রতিষ্ঠান এখনো স্বৈরশাসনের ধারা বহন করছে। র্যাবের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটি দায়মুক্তি ভোগ করছে। বিচারব্যবস্থা এখনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়নি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নেই, এবং সহিংসতার শিকার পরিবারের সদস্যরা ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
শেষে, অস্ট্রেলিয়ার সংসদ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এবং বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়বিচার, সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সংহতি জানায়। তারা অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে আহ্বান জানায়—
– মনসুন বিপ্লব ও এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে,
– ঘোষিত নির্বাচন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদারকিপূর্ণ হয়, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন হয় এবং সব দলের সমান রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়,
– র্যাব বিলুপ্ত করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে,
– আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী বিচারব্যবস্থার সংস্কার সমর্থন করতে,
– দীর্ঘমেয়াদি ও স্বচ্ছ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে, যাতে জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপিত হয়।