আবারও বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য আর প্রবেশ করতে পারবে না প্রতিবেশী দেশটিতে। শুধুমাত্র মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর হয়ে এসব পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে—পাট ও পাটজাতীয় কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ। বিধিনিষেধ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের এসব পণ্য মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর হয়ে সমুদ্রপথে পাঠাতে হবে।
তথ্য বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এ চার ধরনের পাটপণ্যের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ সমুদ্রপথে ভারতে যায়; বাকি ৯৯ শতাংশই যায় স্থলপথে। ফলে কার্যত সহজ ও কম ব্যয়বহুল রপ্তানিপথ বন্ধ হয়ে গেল।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (Bangladesh Jute Spinners Association)–এর সভাপতি তাপস প্রামাণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এ যেন একে একে নিভিছে দেউটি। বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক হয়, এমন সব পদক্ষেপই নিচ্ছে ভারত। আমরা সরকারকে আগেও বলেছি, আবারও বলব—বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে হবে।” আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “ট্রাম্প যদি পুতিনের সঙ্গে বসতে পারেন, তাহলে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কেন বসবে না?” তাঁর মতে, পাশাপাশি বিকল্প বাজার খোঁজা এখন জরুরি।
এর আগে গত ২৭ জুনের আরেক প্রজ্ঞাপনে ডিজিএফটি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। নতুন ঘোষণায় সেই তালিকায় আরও চার পণ্য যুক্ত হলো।
ভারত গত কয়েক মাসে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর একাধিক অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ১৭ মে স্থলপথে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্যের আমদানি বন্ধ করেছিল। তারও আগে, ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (Export Promotion Bureau) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি হয়েছে মোট ১৫৭ কোটি ডলারের, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩.৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে, যার বড় অংশ শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য। ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজারও বাংলাদেশ।