নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে এনসিপি থেকে ২৫ নেতাকর্মীর পদত্যাগ

দলীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও অনিয়মের অভিযোগের জেরে এনসিপি (NCP) থেকে একের পর এক নেতাকর্মীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। গত দুই মাসে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে মোট ২৫ জন নেতা-কর্মী দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিরাও।

সূত্র জানায়, গত ১ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরে সমন্বয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে এনসিপি সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত ৩৩টি জেলা ও প্রায় ২০০টি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরিবারের সদস্যদের পদায়ন, যাচাই-বাছাই ছাড়া নেতৃত্ব প্রদান এবং অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব বিতর্কের জেরে সিলেট জেলা থেকেই ৯ জন নেতা পদত্যাগ করেন এবং দুটি শাখা কমিটি স্থগিত হয়। এর আগেও কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর ৩ জন নেতা পদত্যাগ করেছিলেন।

গত ৯ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন যুগ্ম সমন্বয়কারী শাকিল খান এবং সদস্য মো. রিয়াজ রহমান, মহিউদ্দিন ও কাজী রফিক। শিবচর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, থানা পর্যায়ে দল পরিচালনার দায়িত্ব কিছু অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যা আদর্শিক ও নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মতে, এমন নেতৃত্বের অধীনে ইতিবাচক পরিবর্তন অসম্ভব।

এরপর ১০ আগস্ট ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, দলের কর্মকাণ্ড ও অবস্থান তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ‘জুলাই বিপ্লব’-এর নীতির পরিপন্থি। ৮ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা কমিটি থেকে এ ইউ মাসুদ (আরফান উদ্দিন) পদত্যাগ করেন, অভিযোগ করে যে তাকে প্রধান সমন্বয়কারীর পদ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও যুগ্ম সমন্বয়কারী করা হয়েছে, আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক পদ বণ্টনে প্রভাব ফেলেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

এদিনই শরীয়তপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী তারিকুল ইসলাম, জেলা সদস্য পলাশ খান এবং ডামুড্যা উপজেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী পদত্যাগ করেন, যদিও তারা ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেন। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা কমিটি থেকেও বিএনপি পরিবারের দুই নেতা—ইসমাইল হোসাইন ও ইঞ্জিনিয়ার আলাউদ্দিন—পদত্যাগ করেন। আলাউদ্দিন অভিযোগ করেন, তাকে পূর্বে অবগত না করেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

২৯ জুন মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন ‘জাতীয় পার্টির নেতা’ ও ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন। এছাড়া বাগমারা উপজেলা কমিটি থেকে তিন নেতা—হাদিউজ্জামান রাফি, ফুয়াদ হাসান গানিম ও রাবিউল ইসলাম রাহুল—পদত্যাগ করেন, অভিযোগ করে যে তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কমিটিতে রাখা হয়েছে।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তদন্তে এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি সক্রিয় রয়েছে। কমিটির প্রধান আবদুল্লাহ আল-আমিন জানান, অভিযোগ পেলে প্রাথমিকভাবে শোকজ দেওয়া হয়, পরে যাচাই-বাছাই শেষে সতর্কবার্তা, কমিটি বাতিল বা বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে ভয়ভীতি ও চাপের মুখে অনেক নেতা পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, পদত্যাগের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় এখন দেশব্যাপী সংগঠন গোছানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *