আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে নতুন করে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের আলোচনা শুরু হলেও বেশিরভাগ দলই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami)-এর নেতৃত্বে জোট গঠনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অনেক দলের নেতারা প্রকাশ্যে বিষয়টি অস্বীকার না করলেও তাদের বক্তব্যে আদর্শগত ও চিন্তাগত পার্থক্যের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ফলে আলোচিত বৃহৎ ইসলামি ঐক্য গড়ার সম্ভাবনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ভোটমুখী রাজনীতিতে গতি এসেছে। এরই প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী দেশের সব ইসলামি দলকে এক ছাতার নিচে এনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও সাড়া মিলছে সীমিত পরিসরে।
এবিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (Jamiat Ulema-e-Islam Bangladesh)-এর মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তাদের দলের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই। একইভাবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish)-এর আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জামায়াতের সঙ্গে চিন্তাগত পার্থক্যের কারণে তারা কোনো নির্বাচনি জোটে যাবেন না।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজীও জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে আলেমদের মধ্যে জামায়াতবিরোধী মনোভাব প্রবল, তাই তাদের দল ঐক্যপ্রক্রিয়ায় জামায়াতকে পাশে নিতে রাজি নয়। একই অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (Bangladesh Khelafat Andolon)-এর নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। তিনি বলেন, ইসলামপন্থিদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চেষ্টা চললেও জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার আগ্রহ নেই কারও।
নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক ইসলামাবাদীও জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান। খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, তারা ইসলামি শক্তির ঐক্য চান, তবে সরাসরি জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছেন না।
অন্যদিকে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh)। অতীতের বিরোধিতা ভুলে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে। যদিও দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, এখনো জামায়াতের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)-এর মহাসচিব ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম স্পষ্ট করেন, তারা জামায়াতের সঙ্গে ভোটের সঙ্গী হবেন না। তার মতে, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির ঐক্যই দেশের অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি। এর বাইরে আরো অন্তত ২০ টি অনিবন্ধিত ছোট দল সক্রিয়। অতীতে বহুবার ঐক্যচেষ্টা হলেও তা ভেস্তে গেছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আবারও এই আলোচনা সামনে এলেও, বাস্তবতা হলো—বেশিরভাগ ইসলামি দলই জামায়াতের নেতৃত্বে জোট গঠনে অনাগ্রহী।
এমন বাস্তবতার মুখে ইসলামী দলনিয়ে জোট গঠনের কথা বললেও বাস্তবে তা সম্ভব না বলেই মনে করছেন জামায়াত সংশ্লিষ্টরাই। বিশেষ করে জামায়াতকে বাদ দিয়েই অন্যান্য ইসলামী দলগুলিকে নিয়ে নতুন জোট গঠনের আলোচনা সামনে আসায় এখন অনেকটাই অনিশ্চত জামাতের জোটের আশা।