পিআর পদ্ধতি নিয়ে রিজভীর কটাক্ষ: “এটা কি নারকেল তেলের মতো মাথায় দেয়, নাকি সাবানের মতো মাখে?”

‘পিআর কি নারকেল তেলের মতো মাথায় দেয়, নাকি সাবানের মতো শরীরে মাখে’—এই তির্যক প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi)। শনিবার (আজ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা বিএনপির আয়োজিত নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হলে সমাজের সৎ, যোগ্য ও সম্মানিত মানুষদের দলে যুক্ত করতে হবে। তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন—চাঁদাবাজ, দখলবাজ, ভূমিদস্যু কিংবা যাদের দেখে মানুষ ভয় পায়, তাদের সদস্যপদ দেওয়া যাবে না। তার ভাষায়, “এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিএনপি বড় দল, জনপ্রিয় দল। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে—কোনো সন্ত্রাসী, খুনি কিংবা আওয়ামী লীগের দোসর যাতে ঢুকে না পড়ে।”

তিনি তীব্র আক্রমণ চালিয়ে বলেন, “৩০ লাখ শহিদ আর লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ শেখ হাসিনার মতো শকুনিরা দেশটাকে খুবলে খেয়েছে।”

পিআর নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে রিজভীর প্রশ্ন

হঠাৎ করে কিছু রাজনৈতিক দলের প্রবর্তিত পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ব্যঙ্গ করে বলেন, “জনগণ কি বুঝতে পারবে পিআর কী? এটা কি নারকেল তেলের মতো মাথায় দেয়, নাকি সাবানের মতো শরীরে মাখে?” তার দাবি, এই পদ্ধতিতে ভোটাররা প্রার্থী নয়, বরং দলকে বেছে নেবে, ফলে দলগুলো কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে। ধনী ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা সহজেই এমপি হতে পারবেন, অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মূল্য থাকবে না।

অতীতের গুম-খুন ও দুঃশাসনের অভিযোগ

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করা হয়েছে। ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে।”

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের লক্ষ্য

তিনি স্পষ্ট করেন, বিএনপির মূল লক্ষ্য একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে থাকবে আইনের শাসন, আর মানুষ ভয়ভীতির বাইরে থেকে মতপ্রকাশ করতে পারবে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কচি প্রাণ মীর মুগ্ধ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ বুক পেতে গুলি খেয়েছে। এই রক্তের দাম আমাদের রাখতে হবে।”

সেলিম ভুইয়ার প্রতিক্রিয়া

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া (Selim Bhuiyan) বলেন, “আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হবেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসন বিএনপিকে উপহার দিতে হবে।” পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে তিনি উল্লেখ করেন, নেপালে এই ব্যবস্থা টেকেনি, সরকার দুই মাসও স্থায়ী হয়নি।

তার ভাষায়, সংস্কার কেবল নির্বাচিত সরকারই করতে পারে। আওয়ামী লীগের দোসর বা কর্মীদের বিএনপির সদস্যপদ দেওয়া যাবে না। “আমাদের সংস্কারের সব কথা ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল (Khaled Hossain Mahbub Shyamal)-এর সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম লিডার আহসান উদ্দিন খান শিপন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাঈদুল হক সাঈদ, শেখ মোহাম্মদ শামীম, জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জহিরুল হক খোকনসহ অনেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *