নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে অনুমোদন পাওয়া দেশের ১১৩তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’কে ঘিরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ (Mahbubul Alam Hanif) ক্ষমতার প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন নিয়েছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়া হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটের ঠিকানায় অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে সেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়নি। সেসময় নিজের স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের নামে লাইসেন্স নিয়েছিলেন হানিফ, এবং নিজেও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। নামকরণ করা হয় ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’।
তবে দেশে গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় হানিফ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সেখান থেকেই কৌশল অবলম্বন করে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ভারতের মাটিতে বসে মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করেন এবং নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেন।
চলতি বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—যার মধ্যে আছেন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকসহ অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম চালু হয় এবং জুলাই পর্যন্ত ১০১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। প্রতি বিভাগে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে মঞ্জুরি কমিশন থেকে ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়। হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার আস্থাভাজন হেলথকেয়ার ফার্মার সিইও হালিমুজ্জামানকে চেয়ারম্যান করা হয়। এর আগে ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলেন আর্কিটেক্ট তারিক হাসান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, আইন বিভাগের অধ্যাপক সেলিম তোহা ও গার্মেন্ট মালিক আব্দুল মান্নান। হানিফ ও তার স্ত্রী ভারতে পালিয়ে গেলেও বাকিরা বোর্ডে বহাল রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন করে উপাচার্য নিয়োগেরও চেষ্টা করছে। এজন্য তিনজনের একটি প্যানেল মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্যানেলের প্রথম প্রার্থী হচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি ফারুকুজ্জামান। বাকি দুজন প্রার্থী হলেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান এবং শরিফুল ইসলাম।
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অনুমোদনের ঠিকানায় দেখানো হয়েছিল হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতার নির্মাণাধীন বাড়ি। পরবর্তীতে তার সম্পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করায় সেখান থেকে সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর জেলা পরিষদের নবম তলা ভবনের নকশা পরিবর্তন করে অবৈধভাবে সপ্তম ও অষ্টম তলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম মাসিক ৩ লাখ টাকায় অবৈধভাবে হানিফকে ওই তলা ভাড়া দেন।
তবে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান দাবি করেছেন, এখন আর হানিফ বা অন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জানান, “প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ট্রাস্টি বোর্ডে পদধারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। হানিফ ও তার স্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। পরে বোর্ডের সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে।”