আওয়ামী লীগের মিছিলে স্লোগানের অভিযোগে কারাগারে বাকপ্রতিবন্ধী তরুণ, পরিবারের শঙ্কা চরমে

রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জয় বাংলা স্লোগানে একটি মিছিল বের করলে সেখানে বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যেই ছিলেন সাইদ শেখ নামে এক তরুণ। পরে পুলিশ জানায়, সাইদসহ তিনজনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তবে এ ঘটনায় শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

সাইদের পরিবার ও আইনজীবীরা দাবি করছেন, তিনি বাকপ্রতিবন্ধী। তাদের প্রশ্ন, যে তরুণ নিজের কথা স্পষ্টভাবে বলতে পারে না, সে কীভাবে স্লোগান দেবেন? কিন্তু পুলিশের দাবি, সেদিন মিছিলের সামনে থেকে হাত নাড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন সাইদ।

গ্রেপ্তার থেকে কারাগার

২৪ আগস্ট গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল চলাকালে সাইদকে আটক করা হয়। এরপর সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় সাইদ, রাজু আহমেদ ও শেখ মো. শাকিলকে আদালতের নির্দেশে ২৫ আগস্ট কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়েছেন এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু সাইদের আইনজীবী বলেন, এই অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়। মোহাম্মদ লিটন মিয়ার দাবি, বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সাইদ স্লোগান দিতে পারেন না। আরেক আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, “একজন বাকপ্রতিবন্ধীকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এটা আইনের ভয়াবহ অপব্যবহার।”

আদালতে প্রশ্ন ও তদন্ত কর্মকর্তার অবস্থান

সাইদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন এবং তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাকসুদুল হাসান আদালতে জানান, সাইদের স্পষ্টভাবে কথা বলার ভিডিও প্রমাণ আছে, যদিও মুখে কিছু জড়তা রয়েছে। তার ভাষায়, “জড়তা প্রতিবন্ধীতার মধ্যে পড়ে কিনা, তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাবেন।”

এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন আদেশ দেন, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাইদের পরীক্ষা করে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিতে হবে।

পরিবারের অসহায় অবস্থান

২২ বছর বয়সী সাইদ মুন্সিগঞ্জের খাসহাটের বাসিন্দা হলেও নানি ও মামার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় থাকতেন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সাইদ ছোটবেলা থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী এবং দৈনন্দিন কাজকর্মেও অন্যের ওপর নির্ভরশীল। মাঝেমধ্যে হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতেন, তবে রাজনীতি বা মিছিলে তার সম্পৃক্ততা পরিবারের কাছে অকল্পনীয়।

সাইদের মা সুমি কেঁদে বলেন, “ও হাত দিয়ে ভাত খেতে পারে না, দৌড়াতে গেলে পড়ে যায়। কথাও বোঝা যায় না। এমন একটা ছেলেকে জেলে রাখা হয়েছে। শুনেছি, ওখানে কিছু খাচ্ছে না। আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটার মুক্তি চাই।”

তার মামা সুমন বলেন, “জন্মের পর থেকেই ছেলেটা আমাদের কাছে। ডাক্তার বলেছেন, তাকে ছেড়ে দিলে হয়তো স্বাভাবিক হবে। ও রাজনীতি বোঝে না। যে নিজের কাজ করতে পারে না, সে কীভাবে রাজনীতি করবে?”

এই ঘটনায় সাইদের পরিবার ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তারা বলছেন, একজন বাকপ্রতিবন্ধী তরুণকে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানো অমানবিক ও অন্যায্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *