নির্বাচনে আ. লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন চুন্নু-শামীম: অভিযোগ এনসিপির

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব (Ariful Islam Adeeb) অভিযোগ করেছেন, গত জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা সরাসরি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তার ভাষায়, “জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”

রবিবার রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব মন্তব্য করেন আদীব। তিনি বলেন, জুলাইয়ে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে, গত তিনটি নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। ওইসব নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরাসরি সহযোগী হিসেবে অংশ নিয়ে অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে ভূমিকা রেখেছে।

আদীব আরও জানান, সর্বশেষ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দুই মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু (Mujibul Haque Chunnu) ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী (Shamim Haider Patwary)-এর পোস্টারে স্পষ্ট লেখা ছিল “আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।” ফলে বোঝা যায়, দলটি মূলত সরকারের বিকল্প শক্তি নয় বরং তারই অংশ।

তিনি অভিযোগ করেন, যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, তখন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার জন্য প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ সংগঠনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপকে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে তিনি সরকারের প্রতি জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানান।

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদীব। তিনি উল্লেখ করেন, শহীদ পরিবাররা দাবি জানাতে মাঠে নামলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, এতে অনেকে আহত হন। সরকারের প্রতি শহীদ পরিবার ও আহত সহযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

এনসিপির এই নেতা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরাও গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছিলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তখন অনেকে আটক হন, এখনো ২৫ জন আইনি জটিলতায় রয়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আদীব গুম কমিশনের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কমিশন স্বীকার করেছে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।

নারীদের জন্য সরাসরি আসনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে আদীব বলেন, অন্তত ১০০ আসনে নারী প্রার্থীদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ভোটার হওয়ার বয়সসীমা নিয়ে তার সমালোচনা ছিল। নির্বাচন কমিশন বলেছে, শুধু ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তারাই ভোট দিতে পারবে। এ নিয়ম পরিবর্তন করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাদের ১৮ বছর হবে তাদেরও ভোটাধিকার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, গত ১৫ বছরের মতো রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রভাব আগামী নির্বাচনেও দেখা যেতে পারে। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, নতুন গণপরিষদের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকট ও স্বৈরাচারী কাঠামোর স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। সেই গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন আদীব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *