সেই সাত দলের কর্মসূচির সঙ্গে যুগপৎ কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না এনসিপি

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে একমত হয়ে মাঠে নামছে অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল। এই তালিকায় রয়েছে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস (আজাদ-কাদের গ্রুপ), গণঅধিকার পরিষদ (Gonoadhikar Parishad), এবি পার্টি এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। তারা আগামীকাল (সোমবার) আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

জানা গেছে, আন্দোলনের শুরুতে থাকবে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, পথযাত্রা ও আলোচনা সভা। পরবর্তীতে এসব দল সমন্বিতভাবে বড় পরিসরের কর্মসূচিতে যাবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, সোমবার মগবাজার আল-ফালাহ্ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একইদিনে সমমনা অন্যান্য দলও অভিন্ন দাবিতে নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি জানাবে।

ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতির দাবিতে তারা মাঠে নেমেছেন। এই দাবিতে অন্যান্য দলও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে সরকার যদি দাবি না মানে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

গত কয়েক মাস ধরেই পিআর পদ্ধতি ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে সরব ছিল এসব দল। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সাম্প্রতিক ঘটনার পর ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না পাওয়ায় একসঙ্গে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্তে আসে দলগুলো।

এদিকে পিআর পদ্ধতির বিষয়ে এখনো একমত হতে পারেনি ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল পার্টি – এনসিপি (National Constitutional Party – NCP)। তবে দলটি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়নে আগ্রহী। এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, তাদের দল এখনই সাত দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। আপাতত তারা আলাদা কর্মসূচি বিবেচনা করছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে এবং অভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

এই সাত দলের নেতারা জাতীয় পার্টির (Jatiya Party) কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতেও একমত হয়েছেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগকে যদি ‘ফ্যাসিবাদী দল’ বলে নিষিদ্ধ করা যায়, তবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করা উচিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলেও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে পিআর পদ্ধতি ঘিরে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিএনপি (BNP) দৃঢ়ভাবে এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বেশ কয়েকটি দল পিআরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে রাজনীতিতে মতপার্থক্য বাড়ছে।

পিআরের পক্ষে জনমত গঠনে ইসলামী দলগুলো বেশ সক্রিয়। গত ২৮শে জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে এই পদ্ধতির পক্ষে জোরালো বক্তব্য উঠে আসে। সেখানে ডানপন্থী ১০টি রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেয়— যদি পিআর পদ্ধতি না হয়, তবে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ওইদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কিছু গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছাতে চাইছে।

তবে পিআরের পক্ষের দলগুলো তাদের অবস্থানে অটল। জানা যায়, গত ১৩ই জুন লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে জামায়াত পেছন থেকে ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে একমঞ্চে আসে দলগুলো এবং বিএনপি’কে ঘিরে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলছেন, পিআর ইস্যুটি সরকারকে চাপ দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে; কেউ কেউ এটিকে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর দাবি, এটি জনগণের দাবি ও যৌক্তিক দাবি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৩ বছর ধরে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে। এখন সময় এসেছে দলভিত্তিক নির্বাচনের। এতে প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। তিনি মনে করেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

এই নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং এটি হবে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ— বলেন হামিদুর রহমান আযাদ। তার মতে, ফ্যাসিস্টদের বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের মাধ্যমেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *