রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি (Golam Maula Rony) অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে হঠাৎ করেই ছোট ছোট দলে মিছিল করছে আওয়ামী লীগের নামধারী কিছু গোষ্ঠী। তার ভাষায়, এই আকস্মিক মিছিলগুলো পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
রনি জানান, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে, রমনা পার্ক, সংসদ ভবন কিংবা মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে ১০-১২ জনের দল একত্র হয়ে হঠাৎ স্লোগান দিচ্ছে, ছবি তুলছে, তারপর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। তারা কখনো পার্কে ঢুকে যাচ্ছে, কখনো গলিতে হারিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষ টের পাওয়ার আগেই, আর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই, এসব দল অদৃশ্য হয়ে যায়। এতে পুলিশের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও থাকছে না।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘ঝটিকা আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে, পুলিশের মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কারণ অস্ত্র ব্যবহারের নিয়মকানুন, তদন্ত ও ট্রাইব্যুনালের জটিলতায় তারা অনেক সময় নিরুৎসাহিত থাকে। তার ওপর নতুন আতঙ্ক হলো—ট্রিপল-নাইন এ কল দিয়ে পুলিশ ডাকার পর উল্টো পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে।
রনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই মিছিলকারীরা আসলেই কি আওয়ামী লীগের লোক, নাকি গোপন কোনো সংগঠন তাদের নাম ব্যবহার করছে? তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী পলাতক, সাহস ও আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। তাহলে এই ঘন ঘন মিছিল কি ভয় দেখানোর কৌশল? নাকি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা?”
তার মতে, যদি সত্যিই আওয়ামী লীগ এই ধরনের মিছিল করে থাকে, তবে সেটি তাদের নিজেদের জন্য আরও ভয়াবহ ভবিষ্যৎ ডেকে আনতে পারে। নির্বাচন বানচাল হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই। অথচ দলটির ভেতরে এখনও প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব, দমন-পীড়নের আকাঙ্ক্ষা এবং সহিংসতার প্রবণতা প্রবলভাবে রয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু অডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে যেখানে নেতাদের মুখে রক্ত, সংঘর্ষ ও সহিংসতার আহ্বান শোনা গেছে। “১৫ বছরের শাসন শেষে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও অপমানিত। অনেকে প্রকাশ্যে বলছে—প্রতিশোধ নিতে ‘যত রক্ত দরকার নেবে’।”
রনি সতর্ক করে বলেন, যদি এসব মিছিল আওয়ামী লীগ না করে থাকে, তবে তা আরও ভয়ংকর ইঙ্গিত বহন করে। এর মানে দাঁড়ায়—কোনো গোপন সংগঠন, প্রক্সি গ্রুপ বা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তার ভাষায়, “মুনাফিকি রাজনীতি সবচেয়ে বিপজ্জনক, কারণ গোপন শত্রু প্রকাশ্য শত্রুর চেয়েও ভয়ংকর।”
অন্যদিকে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কেও এখন টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। কিছু এলাকায় বিএনপি জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। তবে জামায়াত এখনও সরাসরি মাঠে নামেনি। ভবিষ্যতে এই দুই দলের মধ্যে সংঘাত শুরু হলে দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও জটিল আকার নিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।