সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটের পরীক্ষিত পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির দাবি করা হলে তা জাতীয় জীবনের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে মতামত ব্যক্ত করার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার পদ্ধতি দেশের জন্য প্রমাণিত ও গ্রহণযোগ্য। অথচ কিছু রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি বা বাড়তি আসন পাওয়ার লোভে যদি কেউ সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচনের দাবি তোলে, তবে তা জাতীয় জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির কোনো প্রস্তাব না থাকা সত্ত্বেও কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবেই তার মোকাবিলা করবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা বিপজ্জনক নজির হয়ে দাঁড়াবে। তার মতে, যদি নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়, তবে অতীতে স্বৈরাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকা ২৮টি দলকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তখন প্রশ্ন উঠবে—নির্বাচন কাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে? তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এরকম সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের অতিরিক্ত সুবিধা নিতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তারা আরও দলের নিষিদ্ধের দাবি তুলতে পারে, যা জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করবে এবং পতিত শক্তিগুলো সুযোগ নেবে।
বিএনপি কোনোভাবেই নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে সঠিক বিচারপ্রক্রিয়া নির্ধারণ করাই সঠিক পথ। তিনি বলেছেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে যদি নিষিদ্ধ চাইতেই হয় তাহলে ২৮টা দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা দলকে নিষিদ্ধ চাইতে হবে। তাহলে নির্বাচনটা কাদেরকে নিয়ে হবে? এদেশে যারা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চাচ্ছে তারা যদি পরে বলে- আমরাও নির্বাচন করবো না। তাহলে এদেশে নির্বাচনের কী হবে? তাদের এই দাবির পিছনে উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধার জন্য হয়তোবা তারা আরও অনেক রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ কামনা করতে পারে।
তিনি আরও মনে করেন, সঠিক সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার গঠন করা না গেলে শুধু জাতীয় নিরাপত্তাই নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। বৈধ সংসদীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে বিএনপি সমর্থন দেবে বলেও জানান তিনি। তবে কোনো এমন উদ্যোগকে বিএনপি উৎসাহিত করবে না, যা ভবিষ্যতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।
আলোচনার টেবিলকেই সব সমস্যার সমাধানের সর্বোত্তম পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আলোচনা করেই সংকট সমাধান সম্ভব।”