শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যে অপমানিত হয়েছিল শিক্ষার্থীরা : ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন—এ বক্তব্যে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা গভীরভাবে অপমানিত বোধ করেছিলেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে গিয়ে এ কথা জানান তিনি। মামলাটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan) এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতিমধ্যেই দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার তাকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার মতে, এই মন্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর একটি বৈধতা তৈরি হয়। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন হলেই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের সন্তান হিসেবে হেয় করা হতো এবং তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলত।

তিনি আরও বলেন, ওই মন্তব্যে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। পরদিন ১৭ জুলাই রাতে তারা দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষণার প্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই সারা দেশে ছাত্র ও জনতা রাজপথে নেমে আসেন। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেদিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

নাহিদ ইসলামের দাবি, ১৭ জুলাই রাতেই সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আন্দোলন প্রত্যাহার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানায়। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানাসহ সারা দেশে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। নানা বাধার মুখেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যান।

সেদিন বহু ছাত্র–জনতা আহত ও নিহত হন। রাতে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরদিন ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় বলে জবানবন্দিতে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। এতে অসংখ্য আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে। তার ভাষ্যে, ১৯ জুলাই তারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যার ফলে আন্দোলনের খবর বা হতাহতদের কোনো তথ্য প্রচার করা হচ্ছিল না।

আগামীকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) আবারও নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি শোনার কথা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *