কোটি কোটি টাকা খরচে সচিব নিয়োগের অভিযোগ, সরব সাবেক সচিব সামসুল আলম

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সচিব নিয়োগে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে—এমন এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন সাবেক সচিব সামসুল আলম (Samsul Alam)। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি আটটি নির্দিষ্ট ঘটনার বর্ণনা দেন, যেখানে নগদ অর্থের বিনিময়ে সচিব বানানোর প্রক্রিয়ার কথা উঠে এসেছে। তার এই পোস্টটি আবার নিজের পেজে শেয়ার করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি (Golam Maula Rony)।

সামসুল আলম পোস্টে লিখেছেন, “বর্তমান সরকারের সময়ে নগদ টাকায় সচিব হয়—এটা কোনো বাজে কথা নয়। চ্যালেঞ্জ করবেন না। প্রমাণ আমি নিজেই জানি।” এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করেন, যা তার দাবি অনুযায়ী সচিব পদে ওঠার পেছনে কোটি কোটি টাকার চুক্তির সাক্ষ্য বহন করে।

প্রথম ঘটনার বর্ণনায় তিনি জানান, গত ডিসেম্বর মাসে ক্যাবিনেট সচিব পদে তার নাম চূড়ান্ত হলেও একটি গোষ্ঠী ফোন করে প্রস্তাব দিয়েছিল—“স্যার, আপনাকে ক্যাবিনেটে বসিয়ে দেবো, আমরা শত কোটি টাকা খরচ করব, আপনি শুধু সম্মতি দিন।” কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ দুর্নীতির সঙ্গে আপস করতে রাজি ছিলেন না।

আরেক ঘটনায় তিনি উল্লেখ করেন, এক অ্যাডিশনাল সেক্রেটারিকে জ্বালানি সচিব বানাতে মোটা অঙ্কের অফার দেওয়া হয়েছিল। সেই কর্মকর্তা পরে তাকে দেখান অন্য একজনের চুক্তিপত্র, যেখানে এনআইডি কপি এবং লিখিত শর্তে সচিব বানানোর প্রমাণ ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজে প্রস্তাবে রাজি হননি।

তৃতীয় ঘটনায় সাবেক সচিব জানান, গত ৩০ মে তার হাতে আসে একটি দলিল, যাতে বর্তমান বাণিজ্য সচিব মাহবুবের নামে ৩৫ কোটি টাকার চুক্তির উল্লেখ ছিল। তিনি জানান, বিষয়টি যাচাই হয়ে সংবাদমাধ্যমে আসার পর আরও তথ্য সামনে আসছে।

এছাড়া তিনি বলেন, ১৩তম ব্যাচের একজন অফিসারকে সচিব বানাতে দুই দফায় ৩০ ও ৩৬ কোটি টাকার অফার এসেছিল। আরেক ঘটনায় কাস্টমস ক্যাডারের এক কর্মকর্তা ৩৫ কোটি টাকায় সচিব হয়েছেন বলে দাবি করেন এক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এমনকি ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বও রয়েছে তার পরিবারের।

সামসুল আলম আরও জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বানানোর জন্য এক ডিজিকে ৩০ কোটি টাকার অফার দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার সচিবকেও ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তার দাবি। যদিও চার মাসের বেশি ওই পদে থাকতে পারেননি তিনি।

সবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সচিব বানাতে একজন অফিসারকে ১২ কোটি টাকার ডিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই কর্মকর্তা অর্থের লেনদেনে রাজি না হয়ে পরবর্তীতে বিনা টাকায় সচিব হন, যদিও দুর্বল অবস্থানে।

সবকটি ঘটনার শেষে সাবেক সচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “এই সরকারের সময়ে টাকা দিয়ে, অর্থাৎ কোটি কোটি টাকা দিয়ে সচিব হয়—এটা কোনো মিথ্যা কথা নয়। সত্য কথা। সম্পূর্ণ সত্য কথা। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।”

বার্তাবাজার/এমএইচ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *