ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দ (Halim Uddin Akand) নামের এক দরবেশের দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার ঘটনাটি দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্তদের মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি মজনু মিয়া (Majnu Mia)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভাইরাল হবার পর আত্মগোপনে থাকা সেই মজনু শেষ পর্যন্ত নিজের দাঁড়ি কেটেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি । মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরী থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার মৃত রজব তালুকদারের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান (Tipu Sultan)।
এর আগে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
ঘটনার শিকার হালিম উদ্দিন আকন্দ নিজেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “বাজারে গেলে আমাকে ধরে জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দেয়। আমি প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও বাঁচতে পারিনি। তখন আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই। পরে পরিবারের কথা শুনে থানায় অভিযোগ করেছি। দেখি, আইন কী বিচার করে।”
তিনি জানান, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল প্রায় ৮-৯ জন স্থানীয় মানুষ। এর মধ্যে স্পষ্টভাবে নয়ন ও মজনুর নাম উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পরও আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হালিম উদ্দিন আকন্দ এলাকাবাসীর কাছে ‘হালিম ফকির’ নামেই পরিচিত। প্রায় ৩৭ বছর আগে হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) মাজারে গিয়েই তিনি জীবন বদলে ফেলেন। এরপর থেকে দাড়ি-চুল না কেটে নির্লিপ্ত জীবনযাপন শুরু করেন এবং কবিরাজি কাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রতিবেশীরা জানান, হালিম উদ্দিন কখনোই মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন না। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্বাভাবিক সংসার জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও ছিল না। তবে এই নির্মম ঘটনার পর তিনি চরম মানসিক আঘাতের মধ্যে আছেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চুল কাটা মুহূর্তে অসহায় ফকির হালিম উদ্দিনের মুখ থেকে বের হওয়া বাক্য—“আল্লাহ, তুই দেহিস”—এখন নেটিজেনদের প্রতিবাদের স্লোগানে পরিণত হয়েছে।