শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে জঙ্গি নাটক, জোরপূর্বক অপহরণ এবং পাতানো নির্বাচনের মতো ঘটনা ঘটেছে শুধু ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার উদ্দেশ্যে—এমনই মন্তব্য করেছেন হাসিনা গণহত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর।
রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তৃতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন তিনি। এসময় আলমগীর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “আমার তদন্তে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার সরকার যত খুন, জখম, অপহরণ ও নির্যাতন করেছে, তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকা।”
এরপর তাকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমীর হোসেন। আদালত আরও জেরার জন্য আগামী সোমবার (৬ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছে। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে এই জবানবন্দি ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আলমগীর তার বক্তব্যে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে বিভিন্ন অপকৌশল নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের আন্দোলনে দেশের সব শ্রেণির মানুষ রাজপথে নেমেছিল।
তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, জুলাই মাসের অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের অন্তত ৪১ জেলায় ৪৩৪টি স্থানে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এছাড়া ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। নিহত-আহতরা ছিলেন নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্র ও জনগণ।
তিনি জানান, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এনটিএসসির মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইল ট্র্যাকিং করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত করা হতো, এরপর হত্যা, জখম, গ্রেফতার ও অন্যায় আটকের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তার মতে, আক্রমণকারীরা ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা, আর ভুক্তভোগীরা ছিলেন নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা।
জবানবন্দিতে তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই গণআন্দোলন চলাকালে সংঘটিত অপরাধগুলো ছিল ব্যাপক, সংগঠিত এবং সাধারণ মানুষের ওপর সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যভিত্তিক নিপীড়ন।
বার্তা বাজার/এস এইচ