কোরআন অবমাননাকারী সেই অপূর্ব ছিলেন একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান

পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (North South University) এক শিক্ষার্থীকে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা গণপিটুনি দিয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে।

পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অপূর্ব পাল নামে এক শিক্ষার্থী মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ অবমাননা করেন। এতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে ঘটনাটির কিছু ভিডিওফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, অপূর্ব পাল নিজেও তার ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন শরীফ অবমাননার ভিডিও আপলোড করেন। এরপর অভিযুক্ত অপূর্বকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে।

এ ঘটনার জেরে দিবাগত রাত ১টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অপূর্ব পালের বাসার সামনে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে অপূর্বকে মারধর শুরু করে।

এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান রাত সোয়া দুইটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে অভিযুক্ত অপূর্বকে আটক করতে গেলে ছাত্র-জনতা আমাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।’

এদিকে অপূর্ব পালকে ঘিরে বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। এই প্রেক্ষাপটে তার সাবেক শিক্ষক আসিফ বিন আলী (Asif Bin Ali) তার ফেসবুক পোস্টে ছাত্রটির একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। পোস্টটি হুবহু নিচে দেওয়া হলো—


নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন, নাম পরিবর্তন করেন, এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি আমার ক্লাস করেছেন জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে।
দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরবর্তীতে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। (অদ্ভুত আচরণের নমুনা দেই, সে এনএসউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে কিংবা টাকনুর উপর কাপড় না পরলে বকা ঝকা করতো)। এই সব নিয়ে ক্যাম্পাসে ভিন্ন ধর্মের একাধিক ছেলে মেয়ের সাথে ওর ঝামেলা হয়। তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বহিষ্কৃত হন।
যদি আমি ভুল না বলি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পরিবারের সংগ্রামের বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে পুনরায় পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ছেলেটির ড্রাগ সমস্যা কিংবা মানসিক সমস্যা—কোনোটিরই যথাযথ চিকিৎসা হয়নি।
আমি জানি না তার সাম্প্রতিক আচরণের পর আর কী বলব, শুধু এটুকু বলতে পারি—সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অতি অন্যায় ও ঘৃণিত। কিন্তু বিষয়টি কোন বড় ষড়যন্ত্র নয়, একজন মানসিক রোগীর কাজ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তাকে চিনতেন, সবাই জানেন। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (রিহ্যাব) পাঠানো।


অপূর্ব পালের ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অতীত জীবনের নানা তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। তবে শিক্ষক আসিফ বিন আলীর এই পোস্টে যেমনটি উঠে এসেছে—অপূর্বের ধর্মান্তরিত হওয়া, পরে ড্রাগে আসক্তি, মানসিক সমস্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ইতিহাস এখন আলোচনায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *