বগুড়ার ধুনটে বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও সেই ঘটনার ভিডিও ধারণের মামলায় নতুন মোড় এসেছে। এই মামলায় ধুনট উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মুরাদুজ্জামান মুকুল (Muraduzzaman Mukul) এবং মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালা (Kripa Sindhu Bala)-র বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. জিয়া উদ্দিন মাহমুদ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এই দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর একদিন আগে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া পিবিআই-এর পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম আদালতে ১ হাজার ৫০০ পাতার বিস্তারিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে প্রভাষক মুরাদুজ্জামান (৪৮) এবং গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২ এ কর্মরত সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালা (৫১)-কে আসামি করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. মোজাম্মেল হক।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ধুনট পৌর এলাকার অফিসারপাড়ার এক কলেজ শিক্ষক দম্পতির স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ধর্ষণ করেন প্রভাষক মুরাদুজ্জামান এবং সেই দৃশ্য নিজের মোবাইলফোনে ধারণ করেন। ঘটনার এক মাস পর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১২ মে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা ধুনট থানায় এজাহার দায়ের করেন।
তখন মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার মোবাইল ফোনে ওই ভিডিওর প্রমাণ পায়। কিন্তু তদন্তের সময় ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আসামির কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ধর্ষণের ভিডিওসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করেন বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলার বাদী পুলিশ সুপারসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃপা সিন্ধু বালাকে ধুনট থানা থেকে প্রত্যাহার করে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি)। এরপর একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর বগুড়া পিবিআই-এর এসআই সবুজ আলী দায়িত্ব পান।
তদন্তে সাক্ষীরা মৌখিক ও লিখিতভাবে জানান, ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আলামত নষ্ট করেছেন। কিন্তু এসআই সবুজ আলী তাদের প্রকৃত সাক্ষ্য গোপন করে কৃপা সিন্ধু বালাকে অন্তর্ভুক্ত না করেই ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে মামলার বাদী নারাজির আবেদন করলে আদালত ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করে সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তার পদে মোট ছয়বার পরিবর্তনের পর অবশেষে পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করে সম্পূর্ণ অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষণ মামলার মূল আসামি মুরাদুজ্জামান দোষী প্রমাণিত হয়েছেন এবং আলামত নষ্টের অভিযোগে কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধেও যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই উভয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
বার্তা বাজার/এস এইচ