গাজার অবরুদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার অভিযানে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর অবশেষে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম (Shahidul Alam)। শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport)-এ অবতরণ করে। সেখানে ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স (Turkish Airlines)-এর একটি ফ্লাইটে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। সেখানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভোর ৫টার পর বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শহিদুল আলম। তিনি জানান, “গাজার মানুষ এখনও আক্রান্ত, তাদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত। যতদিন না এই নির্যাতন থামে, আমাদের কাজ শেষ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই—বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষকে, যারা সারা পৃথিবী থেকে দোয়া, ভালোবাসা ও সংহতি জানিয়েছে।”
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (Freedom Flotilla Coalition) বৃহত্তম নৌযান ‘দ্য কনশায়েন্স’-এ ছিলেন শহিদুল আলম। ওই বহরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ১৪৪ জন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সমাজকর্মী ছিলেন। ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালিয়ে তাদের সবাইকে আটক করে। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে মুক্তি দেওয়া হলেও ওই জাহাজের অস্ট্রেলীয় নারী ক্যাপ্টেন মেডেলেইন হাবিবকে এখনও অনির্দিষ্টকালের জন্য মরুভূমির কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।
বুধবারের সেই অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী নৌবহরের সবাইকে ধরে নিয়ে যায় এবং পরে শহিদুল আলমসহ অনেককে মরুভূমির কুখ্যাত কেৎজিয়েত কারাগারে পাঠায়। তাঁর মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে ধারাবাহিক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসে। অবশেষে সেই প্রচেষ্টার ফলেই মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন এই খ্যাতনামা আলোকচিত্রী।
স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৃক (Drik)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম নাগরিক অধিকার নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও অবরোধ ভাঙার প্রত্যয়ে তিনি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী অভিযানে যোগ দেন। পাশাপাশি ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ (Thousand Madeleines to Gaza) উদ্যোগের আটটি নৌযানও এই অভিযানে অংশ নেয়। ৯টি নৌযানের এই বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যুক্ত ছিলেন।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান (Recep Tayyip Erdoğan)-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)।