আমরা ফল বানাইনি, বাস্তব চিত্রটাই এবার সামনে এসেছে: ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার পেছনে ‘বাস্তব চিত্র’কেই দায়ী করেছেন প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির (Professor Dr. Khondokar Ehsanul Kabir)। তিনি বলেন, “আমরা ফল বানাইনি, এবার বাস্তব চিত্রটাই সামনে এসেছে।” শিক্ষার্থীরা এখন আর আগের মতো মনোযোগী নয়, এবং পড়ার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি (Bangladesh Inter-Education Board Coordination Committee) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড (Dhaka Education Board) এর চেয়ারম্যান হিসেবে।

তিনি জানান, এবার ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ইংরেজিতে পাসের হার ৭৭ শতাংশ থেকে কমে ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “ইংরেজিতে এবার এমসিকিউ বাদ দেওয়া হয়েছে, ফলে প্রশ্ন ছিল তুলনামূলক কঠিন। তাছাড়া ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়—এটা তো বিদেশি ভাষা। দুর্বলতা থাকাটাই স্বাভাবিক।”

চেয়ারম্যান আরও বলেন, এবার পরীক্ষকদের নম্বর দিতে কোনো ধরনের ‘সহানুভূতিমূলক নির্দেশনা’ ছিল না। “আমরা শুনেছি, অতীতে এমনটা হতো। এবার একেবারেই হয়নি। বোর্ড থেকে কোনো পরীক্ষককে নম্বর দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি, বরং যে যেমন লিখেছে, সে তেমন নম্বরই পেয়েছে।”

প্রশ্নপত্র প্রণয়নের প্রসঙ্গে তিনি জানান, এবার ঢাকা বোর্ড নিজে প্রশ্ন তৈরি করেনি। আন্তঃবোর্ড লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে বরিশালের প্রশ্ন ঢাকা বোর্ডে এসেছে, রাজশাহীর প্রশ্ন গিয়েছে কুমিল্লায়। অর্থাৎ, প্রশ্ন নির্ধারণ হয়েছে সম্পূর্ণ দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায়।

শহর ও গ্রামের শিক্ষার বৈষম্য নিয়েও বক্তব্য দেন তিনি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরে পাসের হার ৮৪ শতাংশ হলেও, শরীয়তপুরে তা মাত্র ৪২ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৪২.২৮, কিশোরগঞ্জে ৪৮.৫, টাঙ্গাইলে ৪৪ ও মানিকগঞ্জে ৪৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় যত যাবেন, ততই শিক্ষক সংকট ও সুযোগ-সুবিধার অভাব দেখতে পাবেন। সেটিই ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে।” তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে, এটা আমাদের কাম্য নয়। তবে এই ফলাফলে শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বল জায়গাগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন সেগুলো রিপেয়ার বা রিড্রেস করার দায়িত্ব আমাদের সবার।”

উল্লেখ্য, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *