রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসাইন প্রেমঘটিত কারণে হত্যা হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ছাত্রী এমন তথ্য দিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই ভবনের একটি বাসায় এক কলেজছাত্রীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি—ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহির রহমান নামে আরেক কলেজ ছাত্রের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত এক বছর ধরে ছাত্রীকে টিউশনি করাতেন জোবায়েদ। এই সময়ের মধ্যে ছাত্রী জোবায়েদকে পছন্দ করতে শুরু করেন। বিষয়টি প্রেমিক মাহির মেনে নিতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।’
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হওয়া দুইজনের মধ্যে একজন মাহির রহমান, অন্যজনের নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুজনকেই আটকের জন্য রাত থেকে একাধিক টিম কাজ করছে। মাহির রাজধানীর বোরহানউদ্দিন কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, আর ওই ছাত্রীও একই এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে জুবায়েদ হত্যার আগে ‘লাইভ লোকেশন’ শেয়ার করার ঘটনায় সন্দেহের তীর ওই ছাত্রীর দিকেও যাচ্ছে বলে মনে করছে তার সহপাঠীরা। এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘স্যারকে ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত দূরে আছেন। তখন স্যার নিজেই তার লোকেশন জানান এবং পরে নিজে থেকেই লাইভ লোকেশন শেয়ার করেন।’
হত্যার দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো থানায় মামলা হয়নি। নিহত জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা ওই ছাত্রী, তার বাবা-মাসহ পাঁচজনের নামে মামলা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি বলেছেন, মেয়ের বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাদের নাম উল্লেখ করেই মামলা দিতে চাই। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
মামলার বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের নামে মামলা দিতে চায়, আমরা তা নেব। তবে তাদের বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে।’
এর আগে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ছাত্রীটিকে হেফাজতে নেয়। তবে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরও এখনো পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়নি।
জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।