আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party – BNP)। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, জামায়াতের মালিকানাধীন বিভিন্ন আর্থিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোভাবেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা যাবে না। বিএনপির অভিযোগ, এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রভাবের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে, যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল এবং ইবনে সিনা ট্রাস্টসহ (Ibn Sina Trust) প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াতপন্থি মালিকানাধীন হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তাই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দলটির দাবি, নির্বাচন কমিশনকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে।
বিএনপি জানিয়েছে, সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক তাদের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি বাতিল করেছে এবং সেই শূন্যপদে তড়িঘড়ি করে দলীয় আনুগত্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে—যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান (Dr. Abdul Moyeen Khan)-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-এর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবে। প্রতিনিধি দলে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া।
বৈঠকে বিএনপি ৩৬ দফা প্রস্তাবনা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেবে। এসব প্রস্তাবে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে, সেই সময়ের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার দাবি জানানো হবে। একইসঙ্গে নির্বাচনকালীন প্রশাসনের পুনর্গঠন, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে কমিশনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হবে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর মাসের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনায় উঠে এসেছে যে, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে অনেক কর্মকর্তা অতীতে ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন বা বর্তমানে জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত। ফলে, এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি করতে পারে। এজন্য বিএনপি প্রস্তাব করবে, নির্বাচন কমিশন যেন দল-মত নির্বিশেষে সত্যিকার নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়েই প্যানেল প্রস্তুত করে।
বৈঠকে আরও বলা হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কাঠামো অনুসরণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি কেন্দ্র চালু করা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং ভোটকেন্দ্রের প্রাক-কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করার প্রস্তাবও রাখা হবে।
বিএনপি আরও দাবি তুলবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি পুনর্গঠনের চলমান নির্দেশনা স্থগিত করা হোক। কারণ, তড়িঘড়ি এসব প্রক্রিয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক, শিক্ষক ও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, যা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ব্যাহত করতে পারে বলে দলটির আশঙ্কা।