জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের তদারকি ও পরবর্তী পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন একটি কমিশন গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত এই কমিশনের নাম হতে যাচ্ছে ‘সংস্কার বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিশন’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৭ থেকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনে কে কে থাকবেন, তা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিলুপ্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশির ভাগ সদস্যই নতুন কমিশনে থাকবেন। এর বাইরে দু-একজন নতুন সদস্য ও পূর্বের বিশেষজ্ঞ দল থেকে কিছু ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই কমিশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Professor Ali Riaz)-এর থাকার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দেখা যাক সামনে কী হয়। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সময়ই বলে দেবে আমি ওই কমিশনে থাকব কি না।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ অক্টোবর। কিন্তু এখনও সংসদ সচিবালয়ের অধীন সেই কমিশনের অফিস চালু রয়েছে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন সেখানে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ১ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস করেছেন এবং ২ নভেম্বর কিছুদিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন। তার আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও দেশ ছাড়েন। আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তারা দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। এই সময়ের মধ্যেই নতুন কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংস্কার বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিশনের কাজ হবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশগুলোর ফলোআপ করা। সনদ বাস্তবায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কমিশনের মেয়াদ থাকবে। নির্বাচনের পর যে সরকার গঠন হবে, সেই সরকারকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবে কমিশনটি।
গণভোট ও রাজনৈতিক ঐকমত্য নিয়েও সিদ্ধান্ত আসছে
সরকার নতুন কমিশন গঠনের পাশাপাশি ‘গণভোট’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েও এগোচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে গণভোট নিয়ে সর্বসম্মত মত পাওয়ার চেষ্টা চলছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্বের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন এখন এই সনদের বাস্তবায়নের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের কাজের পর্যালোচনা
১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারা ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করেন সনদের বাস্তবায়নের রূপরেখা। সুপারিশে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এর বাইরে ৯টি সুপারিশ নির্বাহী আদেশে, এবং ২৮টি অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তবে এই সুপারিশ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা অভিযোগ তোলে, এই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশগুলো রাজনীতিতে ঐক্য নয় বরং বিভক্তি তৈরি করেছে। তাদের মতে, কমিশনটি ‘চাপিয়ে দেওয়া’ সংস্কারের পথে হেঁটেছে।
বিভক্তি সত্ত্বেও বাস্তবায়নের প্রত্যাশা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সমালোচনাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে এবং বলেছে, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বিভাজন কাটিয়ে দলগুলো আবার একমত হবে বলে তারা আশাবাদী। এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে থাকা অফিসে কোনো পরিবর্তনের নির্দেশনা না থাকায় কর্মকর্তারা সেখানে নিয়মিত কর্মরত রয়েছেন।
কমিশনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা এবং গণভোট আয়োজনের সম্ভাব্য ঘোষণা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আসতে পারে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে।এই প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে নাকি ঐক্যমত কমিশনের মতো নতুন বিতর্কের জন্ম দিবে তা সময়ই বলে দিবে।


