ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তেজনা ও সংশয়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) এবং আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, যা নির্বাচনকে একটি চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman)।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জিল্লুর রহমান বলেন, “১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ আর ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি— এই দুই দলের কর্মসূচি এখন রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। ঢাকায় কে কী ঘটাবে, দায় কার ঘাড়ে পড়বে— এসব প্রশ্নে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সংঘাত-সংঘর্ষ বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নির্বাচন কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। “এটি খুবই স্পষ্ট যে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।
জিল্লুর রহমানের বিশ্লেষণে উঠে আসে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party বা এনসিপি)-এর কণ্ঠস্বর এখন অনেকটা ক্ষীণ। যদিও তারা এখনও নানা রাজনৈতিক মধ্যস্থতায় সক্রিয়, কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের অবস্থান এখনো কঠোর। সেটা হলো, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের লিখিত আদেশ দেখতে চাওয়া। তার ভাষায়, “এই আদেশ স্বাক্ষর করতে হবে প্রধান উপদেষ্টাকে।”
জামায়াতের অবস্থান নিয়েও বক্তব্য দেন তিনি। “তারা পিআর ইস্যুতে অনড়, তবে তার চেয়েও বেশি অনড় গণভোটের দাবিতে। তারা চায়, জনগণ এই জুলাই সনদ অনুমোদন করে কিনা, সেটার জন্য একটি গণভোট হোক,” বলেন জিল্লুর।
তবে তিনি স্বীকার করেন, “এই গণভোটের বৈজ্ঞানিক বা টেকনিক্যাল দিক নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সুযোগ রয়েছে।”
জামায়াতের দাবি অনুযায়ী, তারা চায় এই গণভোট নির্বাচন পূর্বেই হোক। কিন্তু বিএনপি (BNP)-র অবস্থান আলাদা। তাদের বক্তব্য পরিষ্কার— নির্বাচন ও গণভোট একসাথে হলে তবেই সমর্থনযোগ্য। “বিএনপি কোনো অবস্থাতেই আগেভাগে গণভোট মেনে নেবে না, এ নিয়ে তারা স্পষ্ট,” বলেন জিল্লুর।
তিনি আরও বলেন, “জামায়াত নানা রকম কথা বলছে— কখনও আঙ্গুল বাকা করার কথা, আবার কখনও হুমকির ইঙ্গিত। অপরদিকে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কিছু হবে না। তাদেরও শক্তি আছে। কেউ যদি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে, তারা তা রুখে দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।”
সবমিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ বাড়ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, জোটের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং গণভোট ইস্যু ঘিরে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া এখন অনিশ্চয়তার কুয়াশায় ঢাকা।


