নির্বাচন কমিশন (ইসি) (Election Commission) আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এতে প্রার্থীদের প্রচারণা পদ্ধতিতে আনা হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ। এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ড্রোন, কোয়াডকপ্টারসহ যেকোনো উড়ন্ত যন্ত্র ব্যবহার এবং বিদেশে প্রচার অভিযানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রার্থী তার সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি হতে পারবে না। ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা গেলেও আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ। ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট তৈরিতে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক (পিভিসি), পলিথিন বা রেক্সিনযুক্ত সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এবার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালাতে চাইলে তার অ্যাকাউন্টের নাম, আইডি, ই-মেইলসহ সনাক্তকরণ তথ্য আগে থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে সতর্কতা আরোপ করে বলা হয়েছে— এআই বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর, ঘৃণামূলক, বিকৃত, মানহানিকর বা বানোয়াট কোনো কন্টেন্ট তৈরি, প্রচার বা শেয়ার করা যাবে না।
এছাড়া প্রতিপক্ষকে আক্রমণ, নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, সংখ্যালঘু বা কোনো জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে উসকানিমূলক ভাষা, বা ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। গুজব ও এআই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান সংযোজন করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এ নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল বিদেশে জনসভা, পথসভা বা যেকোনো ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবে না। নির্বাচনের দিন কিংবা প্রচারের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ। ভোটার স্লিপ বিতরণ করা গেলেও তাতে প্রার্থীর নাম, ছবি, প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না।
আরও উল্লেখযোগ্য যে, প্রচারের শব্দমাত্রা ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও রয়েছে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান। গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসি তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে আচরণবিধি মানার অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। একই মঞ্চে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে—রিটার্নিং কর্মকর্তা সকল প্রার্থীর ইশতেহার পাঠের ব্যবস্থা করবেন নির্ধারিত দিনে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারই প্রথমবারের মতো চালু করা হচ্ছে আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা। দেশের অভ্যন্তরে তিন শ্রেণির নাগরিক এবং প্রবাসী ভোটাররা এ পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন।
আচরণবিধির সঙ্গে এবার আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশও জারি করেছে ইসি। এর মধ্য দিয়ে ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা আইন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, পর্যবেক্ষক নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব আইনের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।


