“সরকারের প্রস্তাব ‘চালাকি’, সংকট সৃষ্টি করেছে তারাই” — সাইফুল হক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party)-র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (Saiful Haque)। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সংকটটা তো তৈরি করেছে সরকারই। সমঝোতার বাইরে গিয়ে যে প্রস্তাব তারা হাজির করেছে, সেটাই এই সংকটের মূল উৎস।”

সোমবার (১০ নভেম্বর) দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, “সাংবিধানিক বিষয়ে সরকার আদেশ দিতে পারে কিনা—এই প্রশ্নে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত যে, সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। কিন্তু সরকার সেই সীমারেখা লঙ্ঘন করেছে।”

তিনি জানান, “বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মনে করে, নির্বাচনের দিনেই গণভোট হওয়া উচিত ফেব্রুয়ারিতে। অথচ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোট নির্বাচনের আগে বা পরে—যেকোনো সময় হতে পারে। এর অর্থ, অধিকাংশ দলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নয় মাস সময় লাগবে বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে। আবার বলা হয়েছে, সময়সীমার মধ্যে না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। এটা পুরোপুরি হাস্যকর এবং বিশ্বের কোথাও এর নজির নেই। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়ার বিষয়টিকেও তীব্রভাবে আক্রমণ করে সাইফুল হক বলেন, “এটা একেবারে নিচু মানের চালাকি। যদি সত্যিই সমঝোতার ইচ্ছা থাকত, তাহলে সরকারকে উচিত হতো, যেসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলোকে ভিত্তি ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “যেহেতু জুলাই সনদে দলগুলো সই করেছে এবং গণভোটের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে, সেক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া—নির্বাচনের দিনই যেন গণভোটের আয়োজন করা হয়। এরপর সরকারের কোনো দায়িত্ব থাকে না।”

সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, “যদি সরকারের ঈমান ঠিক থাকে, তাহলে সংকটের সমাধান সহজ হবে। আর যদি সরকারের ভিতরে রাজনৈতিক কৌশল, পক্ষপাত অথবা অনৈতিক অভিপ্রায় থাকে, তাহলে নতুন করে বিপদের সৃষ্টি হবে।”

তিনি সতর্ক করেন, “যদি দেখা যায় সরকার কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, তাহলে তা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং আসন্ন নির্বাচনকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।”

তবে এখনো সমাধানের পথ আছে বলে মত দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “সরকার যদি প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দেখায়, এই সংকট থেকেও উত্তরণ সম্ভব।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *