আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিনই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মধ্যে এই পদক্ষেপকে আপস ও ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্যোগ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো—জুলাই জাতীয় সনদ-এর বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করা এবং সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখা। সেই লক্ষ্যে প্রচলিত একক প্রশ্নের গণভোট কাঠামো বদলে এবার একাধিক—প্রাথমিকভাবে চারটি—প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা করা হয়েছে।
সরকার যে প্রশ্নগুলো গণভোটে তুলতে পারে সেগুলো হলো:
- যেসব বিষয়ে সবদল একমত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে কি না?
- পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন চান কি না?
- ঐকমত্য কমিশন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রস্তাব করেছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে কি না?
- ন্যায়পাল নিয়োগসহ পাঁচটি কমিশনের নিয়োগপদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জনগণের মতামত।
- ঐকমত্য কমিশোনের সুপারিশকৃত সনদের বাকি অংশ নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ বাস্তবায়ন হবে কি না?
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উপদেষ্টাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ব্যক্তিগত মতামতও নেওয়া হয়েছে।
সরকার মনে করছে, এমন একটি সমঝোতামূলক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে এবং এতে কোনো পক্ষপাতের অভিযোগ আসবে না। বরং দলগুলোর অবস্থানকে সমন্বয় করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
আইনি জটিলতা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বিধা
বেশ কিছু আইনি জটিলতা থাকলেও আদেশে স্বাক্ষর করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই নিয়ে এখনো দ্বিমত রয়েছে সরকারের মধ্যে। বিশেষ করে সংবিধানে প্রধান উপদেষ্টার আদেশ স্বাক্ষরের বিধান না থাকার পরেও এতে সাক্ষর করলে পরে আইনগত ভাবে তার কোনো ভিত্তি না থাকায় এনিয়ে অনেকটাই দ্বিধান্বিত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল।
জানা গেছে, আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর পর জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে তা ঘোষণা করবেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
এদিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, সরকার এখনো তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তারা।
একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, “সরকার কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দলীয় অবস্থান কী হতে পারে তা নিয়ে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। এখন অপেক্ষা করছি সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি বা অবস্থান নেওয়া হবে। দলগুলোর মতে-সরকার দলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান নিশ্চয় অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। ”
দলগুলোর মতে, জুলাই আন্দোলনের পথ ধরে অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু গঠিত হয়েছে, তাই এই সরকারকেই সহযোগিতা করেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। ফলে গণভোট বা সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দলগুলোর মতামতকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


