ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জোর প্রস্তুতিতে এনসিপি, শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন সংগ্রহ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন সরব তৎপরতা, ঠিক তখনই পেছিয়ে নেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা এ দলটি ভোটের মাঠে শুরু থেকেই বেশ গতিশীল; আসনভিত্তিক মনোনয়ন সংগ্রহে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দলটি মোট ১ হাজার ১১টি মনোনয়নফরম বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।

দলীয় নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য, এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। দেশের মানুষের রাজনৈতিক চিন্তা ও মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে এনসিপির প্রতি, আর সে কারণেই দলটি এবার এককভাবেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েছে—জয়ের লক্ষ্য সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন আসনে লড়াইয়ে নামবেন।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি ডা. তাসনিম জারা (Dr. Tasnim Jara) যুগান্তরকে বলেন, ‘আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে এনসিপির মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা চলছে। শীর্ষ নেতারা দ্রুতগতিতে ফরম কিনছেন। শুরু থেকেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের মিছিল নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কার্যালয়ে ভিড় করছেন।’

৬ নভেম্বর থেকে এনসিপির মনোনয়ন বিতরণ শুরু হয়েছে, যা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়—বিভিন্ন জেলা কার্যালয়েও ফরম পাওয়া যাচ্ছে; পাশাপাশি নির্ধারিত ওয়েবসাইটেও অনলাইনে ফরম পূরণ ও জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

ইতোমধ্যে মনোনয়ন কিনেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (Nasiruddin Patwary), যিনি ঢাকা-১৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অন্যদিকে কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা-৯ আসনে তাসনিম জারা, ঠাকুরগাঁও-৩ এ কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও কৃষিবিদ উইংয়ের প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা, আর রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ)-এ জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও বিভাগীয় উপকমিটির সদস্য কৃষিবিদ মাসুম বিল্লাহ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) ঢাকা-১১ (বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা) থেকে এবং সদস্য সচিব আখতার রংপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম থাকছেন পঞ্চগড়-১ এ, আর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব লড়বেন ঢাকা-১৪ থেকে। দলটির ঘনিষ্ঠ সরকারে থাকা দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) ও আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud) পদত্যাগ করে এবার সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেবেন—প্রথমজন লক্ষ্মীপুর-১ এবং দ্বিতীয়জন ঢাকা-১০ আসনে লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে আকরাম হুসেইন, ভোলা-১ এ সামান্তা শারমিন, নরসিংদী-২ এ সারোয়ার তুষার, নোয়াখালী-৬ এ আবদুল হান্নান মাসউদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ এ আবদুল্লাহ আল আমিন, কুমিল্লা-১০ এ জয়নাল আবেদীন শিশির, কুড়িগ্রাম-২ এ আতিক মুজাহিদ, ফেনী-২ এ সালেহ উদ্দিন সিফাত, চুয়াডাঙ্গা-২ এ মোল্লা ফারুক এহসান, চট্টগ্রাম-১৬ এ মীর আরশাদুল হক, ঝালকাঠি-১ এ মশিউর রহমান, ঢাকা-৫ এ নিজাম উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ-৫ এ মাহিন সরকার, নওগাঁ-৫ এ মনিরা শারমিন, পটুয়াখালী-২ এ মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এ আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, সিরাজগঞ্জ-২ এ এসএম সাইফ মোস্তাফিজ, বাগেরহাট-৩ এ মোল্যা রহমতুল্লাহ, ফেনী-১ এ এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, নীলফামারী-৪ এ আবু সাঈদ লিয়ন, ঝালকাঠি-১ এ আরিফুর রহমান তুহিন এবং মেহেরপুর-২ এ সাকিল আহমাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘শীর্ষ নেতারা নির্বাচন করবেন। অনেকেই ফরম সংগ্রহ করেছেন, বাকিরাও অল্প সময়ের মধ্যেই কিনবেন। তবে এখনই মোট সংখ্যা প্রকাশ করছি না; পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।’ তার ভাষ্য, প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উপস্থিতি বাড়ছে।

এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সাবেক আমলা, অধ্যাপক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ মনোনয়ন সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে এবং সেক্রেটারি করা হয়েছে ডা. তাসনিম জারাকে। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নফরম বিক্রির উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে দলীয় কার্যালয়ে। প্রতি ফরমের মূল্য রাখা হয়েছে ১০ হাজার টাকা; তবে জুলাই যোদ্ধা ও স্বল্প আয়ের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা।

ফরম বিক্রির সময় বাড়ানোর বিষয়ে ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘আমরা প্রথমে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখছি সারা দেশ থেকে আগ্রহী মনোনয়নপ্রত্যাশীরা উচ্ছ্বাস নিয়ে আসছেন, অনেকে সময়মতো আসতে পারছেন না। তাই ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম কেনার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।’

জোটে যাওয়ার প্রশ্নে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনো দলের ভেতরে আলোচনা চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *