‘গণভোট’ নিয়ে জামাতের যত হাঙ্কি পাঙ্কি, লক্ষ্য পর্দার আড়ালে আসন সমঝোতা

জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি (Bangladesh Jamaat-e-Islami) ও আরও সাতটি দলের গণভোট দাবিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি নাটকীয়তা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এটিকে সরাসরি আন্দোলনের ঢংয়ে উপস্থাপন করলেও এর প্রকৃত উদ্দেশ্য নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তি সুবিধা আদায়ের কৌশল মাত্র।

জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ‘আন্দোলনের’ কথা বলছেন, তখন স্থানীয় পর্যায়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় তারা বেশ এগিয়ে। এমনকি বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আগেই জামায়াত পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে মাঠে নামিয়েছে তাদের প্রার্থীদের। অথচ সেই দলই আবার নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গণভোটের দাবি করছে, যা অনেকের কাছে এক ধরনের ‘দ্বৈত অবস্থান’ বা ‘রাজনৈতিক ধোঁয়াশা’ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এমন অবস্থানের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে সোলটির মধ্যে একধরনের অস্থিরতা, আকাঙ্ক্ষা ও সুবিধাজনক অবস্থান খোঁজার মনোবৃত্তি। তাদের দাবিকৃত “জামায়াত ইতিহাসের সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে” থেকেও ‘আরও অন্য কিছু’ প্রত্যাশা করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত বিএনপির সঙ্গে পর্দার আড়ালে আসন সমঝোতার স্বার্থেই এমন দ্বিমুখী কৌশল নেয়া হয়েছে। জামায়াতের মাঠের জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন এখন যেমন, তাতে সরাসরি প্রতিযোগিতায় জয় পাওয়া কঠিন। তাই তারা চায় এমন কিছু আসন যেখানে বিএনপি দুর্বল প্রার্থী দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীদের সংসদে পাঠাতে পারে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ’৮৬-তে এরশাদের অধীনে জামায়াত পায় ১০টি আসন। ’৯১-তে বিএনপির সহযোগিতায় ১৭টি, ’৯৬-তে এককভাবে ৩টি, ২০০১-এ বিএনপির সঙ্গে জোটে ১৮টি এবং ২০০৮ সালে মাত্র ২টি আসন পায় দলটি। প্রতিবারই জামায়াতের সাফল্য নির্ভর করেছে প্রধানত বিএনপির সমর্থনের ওপর। কিন্তু এবার বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছরের নিপীড়ন ও আন্দোলনমুখর পরিবেশে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কোনো আপোস করতে রাজি নয়। নেতাকর্মীদের চাপও সেই জায়গায় স্পষ্ট।

এমন অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণভোট নিয়ে জামাতের যত হাঙ্কি পাঙ্কি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যতই শক্তিশালী উপস্থিতি দেখাক, জামায়াতের প্রকৃত কৌশল মূলত ‘আসনভিত্তিক সুবিধা আদায়’। তবে মাঠের বাস্তবতায় সেই দাবির ভিত্তি কতটা শক্ত তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *