ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘আইনের বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ক্ষমতার অবস্থান যাই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ড. ইউনূস বলেন, “আজ বাংলাদেশের আদালত এমন স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছে, যা দেশের ভেতরে থেকে বৈশ্বিক পরিসর পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এ রায় জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের প্রতি পর্যাপ্ত না হলেও ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘ দমন-পীড়নের পর এখন দেশ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যে অপরাধগুলোর বিচার হয়েছে, তা শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়—বরং রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যকার মৌলিক আস্থার বন্ধন ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।”
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস বলেন, “প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন—তারা কোনো সংখ্যা নয়, ছিলেন ছাত্র-ছাত্রী, বাবা-মা, এবং অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। তাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছে—এমন অকাট্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে মাসের পর মাস ধরে। এই রায় সেই দুঃসহ দুর্ভোগকে স্বীকৃতি দেয়।”
তিনি জানান, বাংলাদেশের সমাজ এখন এক গভীর জায়গা থেকে উঠে এসে বৈশ্বিক জবাবদিহির মূলধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। “পরিবর্তনের দাবিতে যারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের অনেকেই জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আজ তাদের ত্যাগ আমাদের আগামী দিনের জন্য পথ তৈরি করছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের মধ্যে আস্থার পুনর্গঠন এখন সবচেয়ে জরুরি। মানুষ কেন তাদের জীবনের সবকিছু ঝুঁকিতে ফেলতে প্রস্তুত হয়েছিল, সেই গভীর সত্যটি বুঝতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি যদি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি, তবে ন্যায়বিচার শুধু টিকেই থাকবে না, বরং বিজয়ী হবে।”
এর আগে সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার (Golam Mortuza Mojumdar)-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাকে দুটি অভিযোগে দণ্ড দেন। একটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
এছাড়াও, একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-কে মৃত্যুদণ্ড এবং মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে সহায়তা করায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন (Chowdhury Mamun)-কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


