তিনটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা (Gopalganj)। মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানীর বাকি অংশ নিয়ে গোপালগঞ্জ-২ এবং টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে ছিলেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), গোপালগঞ্জ-২-তে তার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং গোপালগঞ্জ-১ আসনে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল ফারুক খান। তবে এবারের নির্বাচনে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। সেই সুযোগে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
গোপালগঞ্জকে বরাবরই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এবার নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না নৌকার কোনো প্রার্থী বা কর্মীকে। প্রাথীদের প্রায় সবাইই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আর নেতা-কর্মীদের বড় অংশই এলাকা ছাড়া , আবার যারা আছেন তারাও বিএনপি-জামায়াতের সাথে অনেকটা তাল মিলিয়েই এলাকায় টিকে আছেন। এই অনুপস্থিতিতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত। চলছে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, উঠান বৈঠক, হাট-বাজারে সভা, এবং ঘরে ঘরে ভোট চাওয়া। পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো জেলা।
জেলার তিনটি আসনেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। গোপালগঞ্জ-১, ২ ও ৩ আসনে জামায়াতের রয়েছে একক প্রার্থী। তবে বিএনপি শুরুতে একাধিক প্রার্থী নিয়ে প্রচারে থাকলেও এখন তিনটি আসনেই একজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এতে মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। গোপালগঞ্জ-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক সভাপতি এম সিরাজুল ইসলাম। তার ভাষ্য, “আমি যদি মনোনয়ন পেতাম, বিপুল ভোটে জয়ী হতাম। যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি এই জেলায় কখনো রাজনীতি করেননি।”
এদিকে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস. এম. জিলানী নিরবিরোধভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলে জানা গেছে। অপরদিকে জামায়াতের প্রতিটি আসনেই একক প্রার্থী থাকায় সংগঠনটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী সেলিমুজ্জামান মোল্লা ও জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল হামিদ। গোপালগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ডা. কেএম বাবর এবং জামায়াতের এডভোকেট আজমল হোসেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির এস. এম. জিলানী, জামায়াতের মাওলানা রেজাউল করিম এবং ইসলামী আন্দোলনের ইঞ্জিনিয়ার মো. মারুফ শেখ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন, “গোপালগঞ্জে সবসময় বিএনপি সম্মানজনক ভোট পেয়েছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু এবার অনুপস্থিত, তাই এখানে বিএনপির বিকল্প নেই। জামায়াতের ভোট ছিল না বললেই চলে। তারা যতই ঢাকঢোল পিটাক না কেন, ভোটের মাঠে তার প্রতিফলন হবে না।”
তবে জামায়াতের প্রার্থীরা আত্মবিশ্বাসী। তারা বলছেন, গোপালগঞ্জে মানুষ তাদের আদর্শে আস্থা রাখছে এবং এবার প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন। এমএম রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের রাজনীতি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির। আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে চাই।” তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মারুফ শেখও মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত।
বিশেষ নজর এখন গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দিকে, যা শেখ হাসিনা-র দীর্ঘদিনের ঘাঁটি। এখানে তিন দলের প্রার্থীরাই হিন্দু ভোটারদের টানতে নানা কৌশল নিচ্ছেন। পূজার অনুষ্ঠান, ধর্মীয় জমায়েত এবং পারিবারিক দাওয়াতে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। বলছেন, “একবার সুযোগ দিন, পাশে থাকবো সবসময়।”
গোপালগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি মোতাহারুল হক বাবলু বলেন, “এখানকার মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগে বিশ্বাসী। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারায় বিএনপির জন্য বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
গোপালগঞ্জের রাজনীতিতে যে ঢেউ উঠেছে, তা যে ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির চালচিত্রেও প্রভাব ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


