নাসা গ্রুপ (NASA Group)–এর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জোরপূর্বক দখল এবং বাদীকে গুম করে গুলশানের একটি বাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার মামলায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) শুনানি গ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ (Appellate Division of the Supreme Court)। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed)–এর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
‘এ আর এ জুট ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড বনাম মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার ও অন্যান্য’ শীর্ষক মামলার রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। এর ফলে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে আগে দেওয়া আপিল বিভাগের রায় এখন পুনরায় শোনা হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
আদালতে উপস্থিত থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এম. আসাদুজ্জামান বলেন, “দেশে দুজন দরবেশ আছে। একজন সাদা, আরেকজন কালো। কালো দরবেশ হচ্ছে এই মামলার নজরুল ইসলাম মজুমদার। দুজনই এখন কারাগারে। এদের জন্যই দেশের এই অবস্থা। এরা অলিগার্ক—চরম ক্ষমতা চর্চায় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।”
অন্যদিকে, মামলার এক সময়কার আইনজীবী সিনিয়র ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল বলেন, “আমি এই মামলার আইনজীবী ছিলাম। অথচ আমাকে না জানিয়ে অস্ত্রের মুখে এবং বাদীকে গুম করে মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।”
তার বক্তব্যের সমর্থনে সিনিয়র কৌঁসুলি আহসানুল করিম বলেন, “ফিদা এম কামালের অভিযোগই যথেষ্ট। পিটিশনারকে আয়নাঘরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে মামলা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। অপমানে ও ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।”
এই মামলার মূল অভিযোগ অনুযায়ী, রাজধানীর বনানীর বাসিন্দা ও ‘এ আর এ জুট ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল কবির খান দাবি করেন, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গুলশানের একটি বাড়ি দখল করেন।
আনোয়ারুল কবিরের ভাষ্য অনুযায়ী, তার পিতা অগ্রণী ব্যাংক, নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে ব্যবসায়িক ঋণ নিয়েছিলেন, যার বিপরীতে গুলশানের ওই বাড়িটি বন্ধক রাখা হয়। ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার পর, নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে সম্পত্তির একটি জাল সমঝোতা দলিল তৈরি করেন। যে কাগজে স্বাক্ষর দেখানো হয়, তা প্রকৃতপক্ষে দেশে না থাকা দুই পরিবারের সদস্যের নামে জাল স্বাক্ষর ছিল।
আনোয়ারুল কবির আরও জানান, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন এবং গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি লিভ পিটিশনও দায়ের করেন। তবে মামলা পরিচালনায় বাধা দিতে নজরুল ইসলাম মজুমদার তাকে নানা রকম হুমকি দিতে থাকেন।
তিনি বলেন, “একদিন রাতে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু কাগজে সই নিতে বলা হয়। একজন উকিল বলেন, এগুলো মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কাগজ। আমি বাধ্য হয়ে সই করি। পরে হাইকোর্টের নিচে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেও কিছু কাগজে সই করানো হয়। শেষে তারা বলে, আমি যেন তাদের অনুমতি ছাড়া বিদেশে না যাই।”
এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করায় মামলার ভবিষ্যৎ গতি ও ফলাফল নতুন করে আলোচনায় এসেছে।


