আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া একটি গোপন অনলাইন বৈঠকের ভিডিও নতুন করে “ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং” বিতর্ককে সামনে এনে দিয়েছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Saer Khan) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম অনলাইন পরিমণ্ডল।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক মো. আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ইসলামী ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে একটি কথোপকথনে অংশ নিতে। ভিডিও পোস্টকারীদের দাবি, এ বৈঠকে ভোটকেন্দ্রের ভেতর–বাইরের দায়িত্ব বণ্টন, সমন্বয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ঘিরে কিছু পরিকল্পনার আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
তবে বিতর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো—ভিডিওটির সত্যতা এখনো কোনো স্বাধীন সূত্র বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। এর ফলে কথোপকথনের প্রেক্ষাপট, সময়কাল, উদ্দেশ্য কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রকৃত ভূমিকা নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ভিডিওতে কী বলা হয়েছে বা কী উদ্দেশ্যে তা রেকর্ড করা হয়েছে—এসব কিছুই এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো বিতর্কও এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে পুনরায় সামনে এসেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই—এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করায় নতুন ভিডিওটিকে ঘিরে তৈরি হওয়া আলোচনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে পুরোনো অভিযোগগুলো নিয়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিডিওটি যদি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে নির্বাচনী পরিবেশ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব গভীর হতে পারে। তবে একই সঙ্গে তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন—যাচাই–বাছাই ছাড়া এ ধরনের ভিডিওকে সত্য ধরে নেওয়া বা প্রচার করা পরিস্থিতিকে জটিল এবং উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে পারে। তাদের মতে, ভিডিওটির উৎস, সত্যতা ও উদ্দেশ্য নিরূপণে স্বাধীন তদন্তই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর পথ।
অন্যদিকে ভিডিওটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। ফলে বিষয়টি আরও অনিশ্চয়তা ও জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিচ্ছে, যা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।


