রাজনীতির ময়দানে পরিচিত মুখের ঝলক নয়—জনগণের প্রকৃত সমর্থনই হওয়া উচিত মনোনয়ন ও আসন বণ্টনের প্রধান ভিত্তি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ এবার প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ প্রতীকে লড়তে হবে, ফলে কোনো একটি জোটের ছাতার নিচে সব দলের একক প্রতীকের ব্যবহার আর সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে, বিশেষত বিএনপি (BNP) ও জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami)-র মতো দলগুলোর জন্য নিজস্ব প্রতীক পরিত্যাগ করে জোটের নামে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা নতুন করে পর্যালোচনার দাবি রাখে। এটা হয়তো ছোট কিছু দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল হতে পারে অনেক বেশি। কারণ এতে ছোট দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের উদীয়মান নেতারা নতুন সুযোগ পাবেন—দলীয় কাঠামোর মধ্যেই নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার পথ খুলে যাবে।
এই প্রক্রিয়ায় বড় নেতারাও বাধ্য হবেন ব্যক্তি-আবিষ্ট রাজনীতির বদলে দলের দীর্ঘমেয়াদি শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে। যা ভবিষ্যতে তাঁদের রাজনৈতিক দাবি আদায়ের সক্ষমতা বাড়াবে এবং শেষপর্যন্ত লাভবান হবেন জনগণই। এটাই হতে পারে একটি গণতান্ত্রিক ও দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল।
তবে এমন অবস্থান নেওয়াকে কেউ কেউ ‘স্বার্থপরতা’ বলেও ব্যাখ্যা করতে পারেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সংসদের নিম্নকক্ষের ৩০০ আসনই শেষ কথা নয়। একজন নেতাকে, তার মতকে , তার মেধাকে মূল্যায়ন করার, তাকে রাষ্ট্রের উন্নয়নে ব্যবহার করার অনেক উপায় আছে। কোনো নির্দিষ্ট নেতাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে নির্বাচনে জনগণকে অবমূল্যায়ন করা কোনো জনমুখী দলের জন্য মঙ্গলজনক কোনো পদক্ষেপ হতে পারেনা। জনবিচ্ছিন্ন কোনো নেতাকে জোটের নামে জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়াটাও অনুচিত।
সবশেষে বলতেই হয়—যেখানে জনসমর্থন, সেখানেই হোক মনোনয়ন ও আসন সমঝোতা। এটাই হতে পারে বাস্তবসম্মত, দায়িত্বশীল ও নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান।


