জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party)-এর পক্ষ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়া মনিরা শারমিন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করছি।’
গত ১০ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল এনসিপি। সে সময় সদরের নওগাঁ-৫ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিনের নাম আসে প্রার্থীতালিকায়। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী সমঝোতা ঘোষণার পর দলের এই অবস্থান বদলে যায়, যা মনিরাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করে।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থি রাজনীতির ভরসাস্থল ছিল। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ ৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল।”
তিনি আরও বলেন, দলের অবস্থান পরিবর্তনের পর তিনি তাঁর রাজনৈতিক নৈতিকতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। “আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্ট এর চেয়ে আমার গণ অভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মনিরা শারমিন জানান, নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি আগে একটি ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অনুদান নিয়েছিলেন। যারা তাঁকে অর্থ সহায়তা করেছিলেন, তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা নিজেদের ডোনেশন ফেরত চান, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। সেই সংখ্যাটা ১ জন হলেও আমার দায়বদ্ধতা হল, অনুদানের অর্থ ফেরত দেয়া। আমি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুদানের অর্থ ফেরত দেব বিকাশের মাধ্যমে।”
ক্ষমতার রাজনীতির প্রতি নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ক্ষমতার রাজনীতি করতে আসি নাই। রাজনীতি পরিবর্তনের বয়ান দিয়ে সিট ভাগাভাগি করে ক্ষমতায় যেয়ে নিজেদের দলের প্রতি, মানুষের প্রতি বেইনসাফি করব না। জনতার কথা ও নতুন রাজনীতির কথা আপনাদের হয়ে বলতে থাকব ইনশাল্লাহ।”
এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবেন কি না—এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান মনিরা শারমিন। তবে দলের বর্তমান সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন, সেটি স্পষ্ট করে বলেন। তাঁর ভাষায়, “এনসিপি কারো একার সম্পত্তি না। এনসিপি যতখানি শীর্ষ নেতৃত্বের, তার থেকে অনেক বেশি আমার। আজ পর্যন্ত এমন কিছু বলি নাই বা করি নাই যাতে আমার দল বিতর্কিত হয়। তবে নিজের নৈতিকতা বিক্রি করে রাজনীতি করতে চাই না, ক্ষমতায় যেতে চাই না।”
নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের পেছনে থাকা নৈতিকতা, আদর্শ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে তিনি লেখেন, “দোয়া করবেন।”


