জামায়াত জোটে এনসিপি—ভোট রাজনীতি নিয়ে ফাহাম আব্দুস সালামের মূল্যায়ন

জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)-সহ আট দলের জোটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party)। রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জামায়াতের আমির। তবে এই ঘোষণার পর এনসিপির অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড মতবিরোধ। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেত্রী তাসনিম জারা ও তাসনূভা জাবীন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে আরও ৩০ জন নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।

এনসিপির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। রোববার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি বিশ্লেষণধর্মী স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফাহাম আব্দুস সালাম (Fahm Abdus Salam)। তিনি জামায়াত-এনসিপি জোটের কার্যকারিতা ও নির্বাচনী প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি লেখেন, “জোট তৈরি হয় নির্বাচন পার করার জন্য। এই জোট কি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হবে? যেই মানুষটা এনসিপিতে ভোট দেওয়ার কথা—সে যদি ব্যালট পেপারে শাপলা না দেখে, আপনার কি মনে হয় সে জামায়াত বা জোটের অন্য কোনো ইসলামি দলকে ভোট দেবে?”

তার মতে, জামায়াতের সমর্থকরা যদি প্রার্থীতালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক না পান, তাহলে তারা অনেকেই বিএনপি বা কোনো স্বাধীন, তরুণ, এন্টি-এস্ট্যাব্লিশমেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন। “যেই ২৪০ সিটে শাপলা থাকবে না—সেখানে শাপলা না থাকার মূল সুবিধাটা পাবে বিএনপি। হয় ভোট পেয়ে, না হয় ভোট কেটে,” মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “যেই ৩০টার মতো সিটে জামায়াত এগিয়ে আছে, তার একটাও জামায়াত এনসিপিকে দেবে না। জামায়াতের এটা একটা বড় সুবিধা। সে অনায়াসে ২২০ সিট তার মিত্রদের দিয়ে দিলেও নির্বাচনের ফলাফল এক চুল পরিবর্তন হবে না।”

তবে বিপরীতে প্রশ্ন তুলে ফাহাম বলেন, “যেই ৬০টা সিটে জামায়াত কন্টেস্ট করবে না—সেই সব সিটের জামায়াতের বান্ধা ভোটাররা কি শাপলায় ভোট দেবে? কিছু দেবে, কিন্তু অধিকাংশই দেবে না বলে আমার অনুমান।”

তিনি আরও বলেন, “এই জোটকে সফল হতে হলে উভয় দলের নেতা, কর্মী ও ভোটারদের এক্সট্রিম লেভেলের এন্টি-বিএনপি হতে হবে। তা না হলে কোনো পারপাসই সার্ভ করবে না। বিএনপি ও জামায়াত জোট সফল ছিল, কারণ তাদের ভোটাররাই এক্সট্রিম এন্টি-আওয়ামী লীগ ছিল।”

তুলনামূলকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নাই হয়ে গেলে বিএনপি ও জামায়াতও আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে সেই মাত্রার শত্রুতা নেই। এনসিপির ভোটারদের ব্যাপারে কিছু বলা মুশকিল।”

তবে এনসিপির বয়ান তৈরির সক্ষমতার বিষয়ে আশাবাদী তিনি। “এনসিপি ন্যারেটিভ তৈরিতে বিশাল ক্ষমতা রাখে। সে কারণে এনসিপি ক্রমশই ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা সিপিবির মতো বয়ান তৈরিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে,” মন্তব্য করেন ফাহাম আব্দুস সালাম।

এদিকে এনসিপির অভ্যন্তরীণ ভাঙনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে দলীয় নেতাদের পদত্যাগ ও প্রকাশ্য বিরোধিতার মাধ্যমে। বিশেষ করে এনসিপির যে তরুণ ও মধ্যপন্থী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতার দাবি ছিল, তা জামায়াতের মতো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে সমঝোতার ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *