আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party) টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তবে মনোনয়নকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও বিদ্রোহের চিত্রও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঘোষিত তালিকার বাইরে আরও ১৬ জন নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, যা দলীয় ঐক্য ও কৌশলের প্রশ্ন তুলছে।
**টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী)
এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আরও দুজন—কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী ও সাবেক সংসদ সদস্য আশিকা আকবরের ছেলে আফিফ আহমেদ। বহিষ্কৃত নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আসাদুল ইসলাম আজাদও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর):
এখানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু প্রার্থী হচ্ছেন। এই আসনে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর তথ্য পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল):
মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক নাসির। তবে সাবেক মন্ত্রী ও তিনবারের সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান খান আজাদ এবং কেন্দ্রীয় নেতা মো. মাইনুল ইসলাম তাঁর প্রার্থিতায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী):
এ আসনে দলের পক্ষে মনোনীত মো. লুৎফর রহমান মতিন। তবে ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর):
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী। কিন্তু জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় দ্বন্দ্বের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর):
উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আওয়াল মূল প্রার্থী হলেও মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আরও তিনজন—মো. ইকবাল হোসেন খান, ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান ও মো. জুয়েল সরকার। এতে দলীয় ক্ষোভ ও বিভক্তি স্পষ্ট।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর):
শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সহ-সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ সোরহাব, বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ হায়দার খান এবং কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপু হায়দার খান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর):
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান মনোনীত প্রার্থী। এ আসনে শিল্পপতি সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল, হাবিবুর রহমান কামাল এবং বহিষ্কৃত উপজেলা সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমানও মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে রাসেল ও কামালের কোনো কেন্দ্রীয় বা জেলা পদ নেই।
বিভ্রান্তি ও দলীয় সমন্বয়ের অভাব
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জিয়াউল হক শাহীন বলেন, “বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু নির্দিষ্ট কার্যালয় ও পূর্ণাঙ্গ কমিটির অভাবে এখন হযবরল অবস্থা। স্থানীয় সমঝোতার উদ্যোগ না থাকায় আমরা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।”
জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন জানান, “আমরা সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছি। কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাঁদের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনের মাঠে দলের শক্তি ও কৌশল উভয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।


