নতুন সরকার গঠনের তিন মাস পর আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যের বিভেদ আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার ঘটনায় প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে এই বিরোধ।
নতুন দুই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেককে ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি লাল করে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেলেও , এতদিন ধরে সম্মুখ সারিতে থাকা বেশ কিছু নেতার দেখা মেলেনি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে, এমনকি তাদের ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি লাল করে প্রতিবাদও জানাননি অনেকেই। আবার ইতিমধ্যেই সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিরাও এবিষয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঠের নেতাদের কোনো না কোনো কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেখান থেকেই হয়ত বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে।
দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাস পর গত রোববার অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নতুন করে আরও তিনজনকে উপদেষ্টা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ছাড়াও এদিন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ব্যবসায়ী শেখ বশিরউদ্দীন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বশিরউদ্দীন ও ফারুকীর উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রোববার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের বিতর্ক দেখা যায়।
ফেসবুক পোস্টে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নতুন ওই দুই উপদেষ্টা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত।
ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগ হয়েছে এমন দাবি করে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রাতে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেন, ‘সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।’
একইভাবে প্রোফাইল ছবি লাল করে পোস্ট দেন সংগঠনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকসহ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের অনেকেই।
তবে হাসানাতের এই প্রোফাইল লাল করার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেননি এতদিন ধরে তার সাথে পথ চলা আরেক সমন্বয়ক সারজিস। এমনকি দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে জানাননি তার কোনো অবস্থানও। সারজিস’র মতো একই অবস্থানে নাহিদ, আসিফ , মাহফুজের মতো আরো অনেকেরই।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবিষয়ে বলেন, এটা হচ্ছে এক ধরনের বিপ্লব। যতদিন পর্যন্ত না আমরা অনুভব করবো রাষ্ট্রীয় সবখানে এটার প্রতিফলন ঘটছে ততদিন পর্যন্ত এটা চলবে। লাল প্রোফাইলে এই প্রতিবাদ ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই করেছি।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সাথে যাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী তাদেরকে কীসের ভিত্তিতে তারা উপদেষ্টা হচ্ছে এটা আমরা জানতে চাই।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, তাদের মানদণ্ড কী সেটা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। সরকারের এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করা উচিত।
আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, তিন মাসে সরকারের অনেক কিছু করার কথা ছিল, কিন্তু কিছু তো হচ্ছে না। এ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা চিন্তিত।
জবাবে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিরা বলছেন, সরকার যখন যে সিদ্ধান্ত নেয় তার সব সিদ্ধান্ত তাদের সাথে পরামর্শ করে নেয় না। যে কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে এবং তা প্রকাশ্যে এসেছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সরকার অনেক বড় একটা বডি। সরকার সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা নিয়ে সমালোচনা ও দ্বন্দ্ব হচ্ছে এটা আমরা দেখেছি। আমরা কমিউনিকেট করার চেষ্টা করছি, আমাদের ছাত্র সহকর্মীদের এটি নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, পাবলিক সেন্টিমেন্টের জায়গা থেকে কিছু সমালোচনা হচ্ছে সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি। সে অনুযায়ী যদি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটা আমরা ভেবে দেখবো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, নতুন উপদেষ্টা হিসেবে যাদের নেয়া হয়েছে তা নেয়া হয়েছে সরকারের ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য। এবং সব সেক্টরের বেস্ট এক্সপার্টদের নেয়া হয়েছে।
তারপরও যেহেতু এটা নিয়ে সমালোচনা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ক্ষোভ বাড়ছে সে কারণে এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলছেন সরকারের এই উপদেষ্টা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা সবার সাথে কমিউনিকেট ও যোগাযোগ করে এই যে বিরোধ দেখা যাচ্ছে তার সমাধান করার চেষ্টা করবো।