শেখ হাসিনা, আসাদ—এরপর কে ?

গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবি উঠেছে বেশ কিছু দেশে, যখন একের পর এক স্বৈরশাসকের পতন ঘটছে। গত ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে ।এর মাধ্যমে শেষ হয় তার টানা ১৬ বছরের শাসন। মাত্র চার মাস পর রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দেশ ছাড়েন। এরফলে শেষ হয় তার দীর্ঘ দুই দশকের শাসন। এই ঘটনাগুলোর পর আলোচনা শুরু হয়েছে—হাসিনা গেলেন, আসাদ গেলেন, এরপর কে?

বর্তমানে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে স্বৈরশাসন বা একনায়কতান্ত্রিক শাসন চলছে। এসব দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা সীমিত বা বিলোপ করা হয়েছে, আর ক্ষমতা এককভাবে একজন ব্যক্তি, একটি নির্দিষ্ট দলের কিংবা সামরিক বাহিনীর হাতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব দেশগুলোতে পরবর্তী স্বৈরশাসকের পতন ঘটতে পারে।

১. ভেনেজুয়েলা

নিকোলাস মাদুরোর শাসনে, ভেনেজুয়েলা গণতন্ত্র থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। বিরোধী দলগুলো দমন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একচেটিয়া করার কারণে দেশটি একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অধীনে চলে গেছে। অনেকেই মনে করছেন খুব শীঘ্রই হাসিনা-আসাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে মাদুরোকে।

২. বেলারুশ

বেলারুশের শাসক আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপি এবং বিরোধীদের দমন করার কারণে তার শাসন ব্যবস্থা স্বৈরাচারী হিসেবে বিবেচিত। তবে বেলারুশের ভবসিত অনেকটাই নির্ভর করছে রাশিয়ার পুতিনের উপর। পুতিনের ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর ভবিষ্যৎ।

৩. মিয়ানমার

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর ফলে দেশটিতে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে শান্তিতে নেই দেশটি। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের বড় এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে। আরাকান আর্মির সাথে জান্তা সরকারের সংঘর্ষের খবর আসছে প্রতিদিনই। এমন অবস্থায় জান্তা সরকার আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে তা সময়ই বলে দিবে।

৪. কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়ার শাসনব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক, কিন্তু বহু বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের শাসনে এটি কার্যত স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে হুন সেনের ছেলে হুন মানেত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের ঘটনার মতো কিছু কম্বোডিয়াতেও ঘটতে পারে, এবং সরকার পতনের আন্দোলন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যান্য দেশ

এছাড়াও তাজিকিস্তান, ইরিত্রিয়া, তুর্কমেনিস্তান, জিম্বাবুয়ে, বুরুন্ডি, উগান্ডা এবং আরও অনেক দেশেও স্বৈরশাসন বা একনায়কতন্ত্র বিদ্যমান। যতদিন পর্যন্ত জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত স্বৈরশাসকের পতনের এই আন্দোলন চলতে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *