১৯৭১ সাল, মুক্তির সংগ্রামে বাংলাদেশ। দুই শিশুপুত্রসহ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ২ জুলাই গ্রেফতার হলেন বেগম খালেদা জিয়া। যিনি একাত্তরে পাকিস্তানি শাসকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একজন বন্দি— যার স্বামী জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে যুদ্ধরত। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তখন জেড-ফোর্স অধিনায়কের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের খুঁজতে মরিয়া। আক্রোশের শিকার হয়ে তখন কেউ কারাবন্দি, কেউ নৃশংসতায় আহত।
এই যুদ্ধকালেই স্বামীকে সংগ্রামে রেখে ১৬ মে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়া। দুই শিশু সন্তান তারেক রহমান-আরাফাত রহমান ও কর্নেল মাহফুজের (পরে জিয়ার হত্যাকারী) স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চে করে নারায়ণগঞ্জে আসেন সন্ধ্যায়। সেখান থেকে তার বড় বোন প্রয়াত খুরশীদ জাহান হক ও বোনের স্বামী মোজাম্মেল হক জিপ গাড়িতে করে তাদের ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসায় নিয়ে আসেন। এই খবরও গোয়েন্দা তৎপরতায় ছড়িয়ে পড়ে মাত্র ১০ দিনে।
২৬ মে ভগ্নিপতি মোজাম্মেল হক জানতে পারেন, পাক সেনারা খালেদা জিয়ার অবস্থান জেনে ফেলেছে। এরপর থেকে শুরু হলো লুকোচুরি। এই বাসা থেকে ওই বাসা, কেউ-কেউ আবার নিপীড়নের ভয়ে ‘বেগমকে’ জায়গা দিতে অপারগ। দুলাভাই মোজাম্মেল হক ২৮ মে শংকর, সেখান থেকে ৩ জুন অন্যত্র স্থানান্তর করেন খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্র পিনো ও কোকোকে। এরপর অজানা এক ঠিকানা থেকে ভূতত্ব জরিপ অধিদফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর এস কে আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় থাকতে শুরু করেন জিয়াপত্নী। ২ জুলাই ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটকের আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলেন বেগম জিয়া।
যেভাবে আটক হলেন খালেদা জিয়া
এস কে আবদুল্লার সিদ্ধেশ্বরীর বাড়ির অন্দরেই থাকতেন খালেদা জিয়া। তিনি জানতেন পাকিস্তানি বাহিনীর গোয়েন্দারা তার সন্ধান করছে। ‘১৯৭১ সালের ২ জুলাই বেগম খালেদা জিয়াকে সিদ্ধেশ্বরীর এস কে আবদুল্লার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হলো। তিনি সব সময় ভেতরেই থাকতেন এবং বাইরে বেরুতেন না। যেদিন তাকে আটক করা হয়, সেদিন খুব ভোরে বাড়ির বাগান দেখতে বেরিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।’ এভাবেই জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর গ্রেফতারের কথা লিখেছেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।
প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ রচিত ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘আটকের পর খালেদা জিয়া ও তার দুই শিশু সন্তানকে পুরাতন সংসদ ভবনের একটি কক্ষে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একটি বাড়িতে নেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানেই তাকে আটকে রাখা হয়।’
‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ বইয়ের চ্যাপ্টার-১ ‘দিনাজপুর টু ঢাকা’ শীর্ষক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা পতনের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন বেগম জিয়া। বন্দি থাকাকালীন তিনি সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সংকটের সময়ে তিনি সব সময় নিজেকে শান্ত রাখতেন এবং যেকোনও পরিস্থিতি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতেন।’
গ্রেফতার সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৯১ সালের আগস্টে প্রকাশিত সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমদ রচিত ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ শীর্ষক বইয়ে। সেখানে খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান পিনোর একটি বক্তব্য রয়েছে।
মায়ের গ্রেফতারের স্মৃতি নিয়ে পিনোর ভাষ্য, ‘ইঞ্জিনিয়ার চাচার বাড়িতে আমরা বেশ কিছুদিন ছিলাম। তারা আমাদের বেশ যত্ন করতেন। আম্মু ঘরের ভেতর থেকে খুব বের হতেন না। গ্রেফতারের দিন আম্মু ইঞ্জিনিয়ার (আবদুল্লাহ) চাচার বাড়ির বাগানটিতে হাঁটছিলেন— এমন সময় পাক আর্মির জিপ এসে বাড়ি ঘেরাও করলো। এরপর আম্মু, আমরা দু’ভাই, আবদুল্লাহ সাহেব, মজিবুর রহমানের চোখ বাঁধলো আমরা ভয় পেয়েছিলাম। কিন্ত কাঁদিনি।’
‘‘চোখ বাঁধা অবস্থায় জিপে করে প্রথমে পুরনো সংসদ ভবন ও পরে ক্যান্টনমেন্টে আর্মি অফিসার্স মেসে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদের রাখে। ‘এল প্যাটার্ন’ একটি ঘরে আমরা দু’ভাই ও আম্মুকে রাখা হয় । আম্মুকে একদম বেরুতে দেয়নি।’’
বন্দিদশার সাড়ে পাঁচ মাস
‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ গ্রন্থে খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান পিনোর ভাষ্য, ‘আমরা মাঝে মধ্যে বের হতাম খেলাধুলার জন্য। ওরা মেসের খাবার আম্মুর জন্য পাঠিয়ে দিতো। আমাদের জন্য দুধ পাঠাতো। আম্মু সব সময় আমাদের কাছে রাখতেন। আম্মুকে দেখতাম খুব উদ্বিগ্ন। ওই সময় বুঝতাম না। এখন মনে পড়ছে। তবে আমরাও চুপ হয়ে গেলে আম্মু আমাদের গল্প বলতেন। বলতেন, কিছুদিন পরেই আমরা বাড়ি ফিরে যাবো। বন্দি অবস্থায় ঘরে আম্মু সব সময় নামাজ পড়তেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।’
‘‘পাক সেনারা মাঝে-মাঝেই আমাকে জিজ্ঞাসা করতো আব্বু কোথায়? ছোট ভাই কোকো খুব ছোট ছিল। তবে সে বুঝতো— ওদের জন্যই আমাদের আজ এই পরিণতি । একদিন কোকো এক কাণ্ড করে বসলো। একজন পাক আর্মি আসতেই সে বললো ‘আংকেল আলু।’ সেনাবাহিনীতে একটা নিয়ম আছে যে, আর্মিদেরকে ছেলেমেয়েরা আংকেল ডাকতো। কিন্তু কোকো ওই দিন রাগেই বলেছিল ‘আংকেল আলু’।’’
‘আমরা মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন আগে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। প্রচণ্ড বোমা বর্ষণের শব্দে কান ফেটে যেতে চাইতো। আম্মু আমাদের কোলে জড়িয়ে ধরে রাখতেন। যুদ্ধের সময় আমাদের ঘরটির একাংশে বোমা পড়ে। প্রচণ্ড শব্দে আমরা কাপঁছিলাম। কান্নাও আমাদের থেমে গিয়েছিল। সেদিন আম্মুকে কাঁদতে দেখেছি।’ (নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া: পৃষ্ঠা: ৩৫)
সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমদ তার গ্রন্থে জানাচ্ছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ও মোজাম্মেল হক সাহেব গ্রেফতার হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর মিসেস খুরশীদ জাহান তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। সেই স্মৃতি বর্ণনা করলেন তিনি— ক্যান্টনমেন্টে ক্যাপ্টেন আনসারী নামে একজন পাঞ্জাবি অফিসার ছিল। দেখা করার অনুমতির জন্য কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করছি। অবশেষে তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমার নাম জিজ্ঞাসা করেন। আমি নাম বললাম। তিনি জানান, খুরশীদ নামে তার একজন বোন আছে। তার দয়া হলো।’
‘তিনি আমাকে আমার স্বামী ও পুতুলের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করেন। অবশ্য পুতুলের সঙ্গে অনেক পরে দেখা হয়। পুতুলের দায়িত্বে ছিলেন মেজর কিয়ানী। তিনি হজ্ব করে এসেছিলেন। পুতুলকে একটি নামাজের বিছানা দিয়ে বলেছিলেন, নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। আমি মাঝে মাঝেই যেতাম। ওদের জন্য দুধ নিয়ে যেতাম। ক্যাপ্টেন আনসারী আমাকে ওদের খবর দিতো।’ বলেন খুরশীদ জাহান।
আবদাল আহমেদ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় হয়। খালেদা জিয়া সাড়ে পাঁচ মাস ক্যান্টনমেন্টে বন্দি থাকার পর ১৬ই ডিসেম্বর সকালে মুক্তি পান। সকালে দুই ছেলেকে নিয়ে একটি জিপে করে তাকে তার চাচা শ্বশুরের পুরানা পল্টনের বাসায় নিয়ে আসা হয়।’
‘কিন্তু বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে এসে সেদিন তিনি জিয়ার কোনও খোঁজ পেলেন না। শঙ্কা তখনও কাটেনি। জিয়া কি বেঁচে আছে? সেই বর্ণনাই দিলেন খুরশীদ জাহান (খালেদা জিয়ার বড় বোন): ‘বিজয়ের খবর পেয়েই দৌড়ে যাই ক্যান্টনমেন্টে। কারণ শেষের দিকে পুতুলের আর খবর পাইনি। ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে দেখি পুতুল নেই। সে যে ঘরটিতে থাকতো, ঘরটির এক অংশ ধ্বংসস্তূপ ও বিরাট গর্ত হয়ে আছ। আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। তাহলে কি বোমা বর্ষণে পুতুলরা মারা গেছে? দৌড়ে গেলাম হোটেল ইন্টারকন্টিন্যালে (বর্তমান হোটেল শেরাটন), সেখানে গিয়ে জেনারেল অরোরাকে ধরলাম। তিনি জানালেন মিসেস জিয়া ও তার ছেলেদের পুরানা পল্টনের বাসায় পাঠানো হয়েছে। আশ্বস্ত হলাম। এসে দেখি পুতুল। আমার বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। গলা ফাটিয়ে কাঁদলাম।’
স্ত্রী গ্রেফতার, জেনারেল জামশেদকে লিখিত হুমকি জিয়ার
১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট স্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন জিয়াউর রহমান। তৎকালীন পাকিস্তানি আর্মির মেজর জেনারেল জামশেদ তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। তার অধীনে আটক ছিলেন বেগম জিয়া। জিয়াউর রহমান যখন পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কর্মরত, তখন তার কমান্ডার ছিলেন জামশেদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম তার লেখা ‘রক্তে ভেজা একাত্তর’ এ লিখেছেন ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট জিয়াউর রহমান জামশেদকে একটি চিঠি লিখেন। সেই চিঠি তিনি পড়েন। ইংরেজিতে সেখানে লেখা, ‘ডিয়ার জেনারেল জামশেদ, মাই ওয়াইফ খালেদা ইজ আন্ডার ইওর কাস্টডি। ইফ ইউ ডু নট ট্রিট হার উইথ রেসপেক্ট, আই উইল কিল ইউ সামডে।’
সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ খালেদা জিয়ার জীবনীগ্রন্থে জানান, ‘‘জিয়ার সেই চিঠি শাফায়াত জামিল ‘অকুপাইড’ এলাকা থেকে পোস্ট করেছিলেন এবং মেজর জেনারেল জামশেদের কাছে সেই চিঠি পৌঁছায়।’
ওই সময় জিয়া তার পরিবার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক মুহম্মদ শামসুল হককে উদ্ধৃত করে লেখক মাহফুজউল্লাহ লিখেন, ‘তবে যা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল তা হলো— প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা ও যন্ত্রণা, যা তিনি (জিয়াউর রহমান) দীর্ঘ ৯ মাস তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি করে শান্ত ও সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছিলেন। তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে একের পর এক হুমকি দিয়ে আল্টিমেটাম পাঠায়।’
জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ
১৬ ডিসেম্বর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়ে দুটি বিবরণ মিলেছে। সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ তার বইয়ে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি আর্মি আত্মসমর্পণ করার পর খালেদা জিয়া ও দুই পুত্রকে ঢাকা থেকে বিমানে সিলেটের শমসেরনগরে নেওয়া হয়। জিয়াউর রহমানের অনুরোধে জেনারেল অরোরা সে ব্যবস্থা করেন। শমসেরনগর বিমানবন্দরে মেজর চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ তাদের রিসিভ করে স্থানীয় একটি রেস্ট হাউজে নিয়ে যান। শমসেরনগরে খুব অল্প সময় থেকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চলে যান খালেদা জিয়া ও তাদের দুই সন্তান।’
আরেকটি বর্ণনা এসেছে সৈয়দ আবদাল আহমদের বইয়ে। খালেদা জিয়ার বড়বোন খুরশীদ জাহানের ভাষ্যে। লেখক উল্লেখ করেন, ‘কিন্তু বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে এসে সেদিন তিনি জিয়ার কোন খোঁজ পেলেন না। শঙ্কা তখনও কাটেনি। জিয়া কি বেঁচে আছে?’
খুরশীদ জাহানের ভাষ্যে— ‘…কিন্তু তখনও জিয়ার খবর জানি না। এভাবে একদিন দু’দিন করে দিন যেতে থাকলো। কেউ বললো জিয়া আহত, কেউ বললো ওকে আসতে দিচ্ছে না। অনেক গুজব। সব গুজব পুতুলের কানে দিতাম না। এভাবে বিশ-পঁচিশ দিন কেটে যায়।’
‘আমরা দু’বোন একদিন বায়তুল মোকাররমে কিছু কেনাকাটা করতে গেলাম। কারণ কাপড়-চোপড় তেমন কিছুই ছিল না। লুটপাট হয়ে গিয়েছিল। কেনাকাটা সেরে বাসায় আসতেই হঠাৎ দেখি, পুতুলের বড় ছেলে পিনো ও আমার ছেলে ডন তিনতলা থেকে চিৎকার করে বলছে, আব্বু এসে গেছে, খালু এসে গেছে।’
খুরশীদ জাহান আরও উল্লেখ করেন, ‘বাসার আঙিনায় যেতেই জিয়া দৌড়ে এলো। পুতুলকে জড়িয়ে ধরলো। দেখলাম, ওরা যেন এই দুনিয়ায় নেই। দু’জনের চোখেই অশ্রু। আবেগে কেউ কিছু বলতে পারছে না। থরথর কাঁপছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ হুঁশ হলে জিয়া তাকিয়ে আমাকে দেখে থতমত হয়ে ওঠে। এরপর আমাকে সালাম করে। সেই দৃশ্য ভুলবার নয়।’
সাংবাদিক আবদাল আহমদ তার বইয়ে লিখেছে, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অতুলনীয়। প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ না নিলেও বেগম জিয়ার যে ত্যাগ তা রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়াও ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।’
১৯৭১ সালের ২ জুলাই হানাদার বাহিনীর হাতে খালেদা জিয়ার আটকের শুরু। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সরকারের আমলে আটক হন, অবরুদ্ধ হন অসংখ্য বার। দেশের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এই অকুতোভয় নেত্রীকে স্যালুট।