দখল নাকি পুনরুদ্ধার?

দীর্ঘ সতেরো বছর পর আবার যায়যায়দিন-এ ফিরেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান। পত্রিকাটি আবার তার সম্পাদনায় ফিরেছে। রোববার যায়যায়দিন-এর সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাল গোলাপ দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত যায়যায়দিন ১/১১ এর পটপরিবর্তনের পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব , আওয়ামীলীগ নেতা সাবেরে হোসেন চৌধুরীর ভাই সাঈদ হোসেন চৌধুরীর দখলে চলে যায় আর একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে শফিক রেহমান হন দেশান্তর। ৫ই অগস্টের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দেশে ফেরেন শফিক রেহমান আর ফিরলেন তার পুরানো প্রতিষ্ঠান যায়যায়দিনএ।

এখনো হয়তো অনেক অনলাইন একটিভিস্ট আর মুক্ত সাংবাদিকতার ধজ্বাধারীরা বলতে শুরু করবেন সাংবাদিক শফিক রেহমান দখল নিয়েছে যায়যায়দিন। ঢালাও ভাবে দখলের খবর এখন অনেকটাই মুখরোচক নিউজ। অনেক ক্ষেত্রেই এমনটাই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ১৫ বছর ধরে যারা রাস্তায় থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করল, তাদের গায়ে ঘন্ধ ছোটাতে এখন অনেকেই মরিয়া। কেউ বন্ধু সেজে উপদেশের নামে বিএনপি’র নেতা কর্মীদের নামে কালিমা লেপনে ব্যস্ত আর কেউবা যথারীতি শেখ হাসিনার বয়ান (বিএনপি-আওয়ামীলীগ সবই সমান) বাস্তবায়নে এমন প্রচারণাতে ব্যস্ত।

আমরা অনেকেই হয়তো বুঝতে পারিনা কোনটা দখল আর কোনটা পুনরুদ্ধার। গত ১৫ বছরে বিএনপি-জামাতের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মী হয়েছে ভিটা ছাড়া আর এক পর্যায়ে তারা হয়েছে ভিটে-হারা। তাদের হাতে গড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা হয়েছে বিতাড়িত। তাদের পৌত্রিক ভিটে হয়েছে দখল। এক যুগ ধরে এই সব হারা নেতা-কর্মীরা কাটিয়েছেন মানবেতর জীবন। ৫ই আগস্টের পোত্ পরিবর্তনের পর এসব নেতা-কর্মীরা ফিরেছেন নিজেদের এলাকায়। দলীয় কমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এদের অনেকেই হয়তো দখল নিতে শুরু করেছে তাদের ভিটা-মাটি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার এমন সুযোগে কোনো কোনো সুযোগ সন্ধানী যে সুযোগের সদ্ব্যাবহার করছে না সেটা বলারও কোনো উপায় নেই। এমন ঘটনাও যে ঘটছে তাও বাস্তবতা।

তার এই জাতীয় দখলের ঢালাও অভিযোগ না করে আমাদের এর পেছনের বাস্তবতাটা বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। ঢালাও অভিযোগ না করে কোনটা দখল আর কোনটা পুনর্দখল তাও বুঝতে হবে। বাংলাদেশে মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘসূত্রিতার কথা বিবেচনায় নিয়ে কিভাবে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।

আসুন ঢালাও অভিজোদের আগে কতগুলো প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি–
১। করা দখল করছে ?
২। কি দখল করছে?
৩। কিভাবে দখল করছে ?
৪। কেন দখল করছে ?
৫। কাদের কাছ থেকে দখল করছে ?
৬। যাদের কাছ থেকে দখল করছে তারা কিভাবে এই সম্পত্তির দখলদার বনেছিল ?
৭। দখল না করলে এই সম্পত্তি ভবিষ্যতে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে?

আমার মনে হয় সাত নম্বর প্রশ্নটাই সবথেকে জরুরি। এই প্রশ্নটার উত্তর জানার চেষ্টা করলেই মনে হতে পারে পুনর্দখলের অনেকটাই জায়েজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *