দশ মাসে নয়টি দেশ সফর, মুখোমুখি হননি একবারও—ড. ইউনূসকে ঘিরে উঠছে প্রশ্ন

দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। বিশেষ করে তাঁর একের পর এক বিদেশ সফর, দেশের গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে তাঁর ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জিজ্ঞাসা। বিখ্যাত নোবেলজয়ী হলেও বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি যেভাবে গণমাধ্যম ও জনগণের মুখোমুখি হননি, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজতবা খন্দকার। নিচে তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

এরই মধ্যে দশ মাসে নয় দেশ সফর করে ফেলেছেন ইউনূস। আগামী ১২ জুন ফের লন্ডন সফরে যাচ্ছেন! রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করে তিনি যে ক’দিন পর বিদেশ সফরে যাচ্ছেন,তাতে দেশের হাতি ঘোড়া কি লাভটা হচ্ছে সেটা কিন্তু আমরা কেউ জানিনা। তিনি একা গেলে না হয় কথা উঠতো না।তিনি তো যাচ্ছেন তার লাটবহরসমেত। কিন্তু তার এসব সফরে দেশের জন্য লাভটা কি হলো,সেটা আমরা জানতে পারছি,তার সফরসঙ্গীদের সোশাল মিডিয়ার কল্যানে। তিনি নিজে তার সফর নিয়ে কখনো মুখ খোলেননি! কিন্তু কেন?
হাসিনার একটা দোষ ছিলো,সে প্রতি সফরের পর প্রেস কনফারেন্সের নামে,তার অনুগত সাংবাদিক নামের ভাড়দের মেলা বসাতো। সেই সংবাদ সম্মেলন নামের মেলায়, বিদেশ সফরের বিষয়বস্তু ঢেকে যেতো,সাংবাদিকদের স্তাবকতায়। প্রতিযোগিতা হতো,কে কত হাসিনাকে স্তুতি করতে পারে সেটার।
ওইটা ছিলো,হাসিনা।
কিন্তু ইউনূস তো, দেশের মিডিয়াকেই আমলে নেয়না। দাযিত্বগ্রহনের পর দশ মাস চললো, একটা দিনের জন্যও তিনি দেশের সাংবাদিকদের ফেস করলেননা!
আমি সেপ্টেম্বরেই ডক্টর ইউনূসের প্রেস সচিব মি.শফিকুল আলমের কাছে তুলেছিলাম বিষয়টা। শফিক আমাকে যে জবাব দিলেন,সেটা শুনে আমি তো থ। শফিকের বক্তব্য ছিলো এরকম,আপনাদের দেশের মিডিয়া কি লিখলো আর কি লিখলোনা সেইটা নিয়ে ডক্টর ইউনূসের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তিনি ফরেন মিডিয়ার ব্যাপারে বেশী সেনসিটিভ। আমি শফিককে বলেছিলাম, গত পনের বছরে হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ডক্টর ইউনূসকে গরীবের রক্ত চোষা, লোভি,ভিলেন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো সেটা সত্য। কিন্তু তখনের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট সম্পুর্ন আলাদা। তখন ইউনুস ছিলেন,স্রেফ একজন নোবেল লরিয়েট। বাংলাদেশ নিয়ে তার কোনো ভাবনা চিন্তা ছিলোনা। তিনি দেশে হাসিনার মত একটা ফ্যাসিষ্টের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠনে কোনো ভূমিকা রাখেননি, হাসিনা গেষ্টাপো বাহিনীর গুম খুন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি, সব সময় ছিলেন নির্বিকার।
কিন্তু এখন তিনি আর সব কিছু এড়িয়ে চলতে পারেননা।কারন এখন তিনি দেশের প্রধান নির্বাহী।তাকে কথা বলতে হবে। মিডিয়ার প্রতি বিগত অভিমান পুষে রাখলে চলবেনা। কারন তিনি এখন দেশ ও জনগনের রক্ষাকবচের ভূমিকায় আসিন। ভুলে গেলে চলবেনা,ডক্টর ইউনুস সরকার অবৈধ না হলেও অনির্বাচিত। এখন দেশে কোনো সংসদ নেই,কিন্তু তাই বলে তিনি তো জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নন। সুতরাং তাকে জনগনের কাছে জবাবদিহিতা ফেস করতে হবে মিডিয়ার মাধ্যমে। আমি শফিককে বলেছিলাম,স্যারকে বোঝান,প্লিজ। শফিক চীফ এডভাইজারকে কি বুঝিয়েছিলেন,আমি জানিনা। ফলো আপ করতে,কয়েকবার তাকে ফোন দিলেও তিনি আমার ফোন ধরেননি। ফোন ব্যাক করারও প্রয়োজন মনে করেননি। অথচ আমার আগের পোষ্টগুলো যারা পড়েছেন,তারা জানেনন,শফিকের সাথে আমার সম্পর্কটা কি ছিলো!যাইহোক।
..
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ধোয়াশা কাজ করছে। বিএনপিসহ সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেও ইউনূস মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। তার এই বসে থাকাটার পেছনে,নিশ্চিতভাবেই কোনো কারন আছে,কিন্তু সেইটা কি,তাও তো তিনি জনগনকে জানাচ্ছেন না। উল্টো জাপানে গিয়ে হুট করে বলে বসলেন,বিএনপি ছাড়া ডিসেম্বরে কেউ নির্বাচন চায়না। ডক্টরের এই বক্তব্য যে কতখানি সারবত্তাহীন সেটা কি নতুন করে বলার দরকার আছে?
ডক্টর ইউনূস একজন বিশ্ব নন্দিত চরিত্র। পৃথিবীর সবাই জানে,তিনি কোনো দলের প্রতি কোনো প্রকার বায়াসড নন। তাহলে বিএনপির নাম উল্লেখ করে, জাপানে তিনি নির্বাচন নিয়ে যে অসত্য তথ্য দিলেন,এরপরেও কি তাকে নিরপেক্ষ বলা যাবে?
..
একটা বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ডক্টর ইউনুস ক্ষমতা নিয়েছিলেন, দেশবাসী তার প্রতি ভরসা করেছিলো,কিন্তু এই দশমাসে জনগনকে কতটুকু আশ্বস্ত করতে পেরেছেন তিনি?
ওয়েল,তিনি রিফর্ম চান,জুলাই রেভ্যুলেশনের চার্টাড চান,সব কিছু ওকে। কিন্তু কবে চান,কিভাবে চান।অথবা তার উপদেষ্টারা কিভাবে চান সেটা কি তিনি নিজ মুখে কখনো খোলাসা করেছেন,করেননি।তাহলে জনগন কীভাবে তাকে সমর্থন দেবে।তার প্রতি আস্থা রাখবে?
..
তিনি গত দশ মাসে জনগনের উদ্দেশ্য সাকুল্যে চারবার ভাষন দিয়েছেন।ভাষন মানেই,নিজের সাফাই। এই দেশের মানুষ সেটা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছে। কিন্তু কেবলমাত্র ভাষনে একটি সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেনা। সেইটা ডক্টর ইউনূস কি বোঝেননা।
..
কিছু দিন আগে তিনি অভিমানে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এনসিপির আহবায়ক তার একদা কলিগ নাহিদ ইসলামের কাছে আমরা জানলাম। এরপরের দিন, তার আরেক কলিগ বর্ষিয়ান উপদেষ্টা ওয়াউদ্দিন মাহমুদ জানালেন,তিনি পদত্যাগ করছেননা, তাদের সাথেই থাকছেন।
কিন্তু কি অদ্ভুত! আমরা একটা সেন্টিমেন্টাল স্টেটে বাস করছি। যে দেশের প্রধান নির্বাহী অভিমানে পদত্যাগ করতে চান। অথচ, এই রাগ অভিমান করাটাও যে ওই পদে থেকে করা যায়না।তাহলে শপথভঙ্গ হয়,সে আক্কেলজ্ঞানটুকুও সরকারের কারো নেই।
..
বুঝলাম, সব কিছু মিলিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট। তাহলে তিনি কেন জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সেটা জানাচ্ছেননা। মিডিয়া ফেস করতে তার ভয় কিসের? তিনি একজন নন্দিত ব্যক্তি ক্রান্তিকালে দেশের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে,জাতিকে তিনি উদ্ধার করেছেন। তার কেন,মিডিয়া ফেস করতে এত ভয়! আমি জানিনা তার ভয়টা কোথায়? তবে,আমি কেবলি অশনিসংকেতের আভাষ পাচ্ছি। সব কিছু সত্ত্বেও
আমি ডক্টর ইউনূসের রাজসিক প্রস্থান কামনা করছি।🔴

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *