আসছে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল, নাম হতে পারে ‘জনশক্তি’

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পথে

জুলাই-আগস্টের স্বৈরাচারের পতন ঘটানো ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন। সম্ভাব্যত আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এই দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি।

দল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন কীভাবে এবং কোন নীতির ভিত্তিতে দলটি গঠন করা হবে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানা গেছে, দলের নীতি-আদর্শ, লক্ষ্য এবং মেনিফেস্টো নিয়ে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন অংশীজনের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনাও করছে।

নতুন রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য

জুলাই অভ্যুত্থানের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গঠিত এই দলটি বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে আলাদা হবে। সম্ভাব্য নাম হিসেবে ‘জনশক্তি’ প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নাম পরিবর্তন হতে পারে। ছাত্রনেতারা জানান, জনগণের আস্থা অর্জন করাই হবে দলের মূল লক্ষ্য।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী জানান, নতুন এই দল একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, “এই দলে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী কাঠামো থাকবে না। পুরনো রাজনৈতিক সমস্যাগুলো, যেমন টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজি, এগুলো আমরা এড়িয়ে চলব। আমাদের লক্ষ্য হবে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সারজিস আলম আশাবাদ প্রকাশ করেন যে নতুন দল কথায় নয়, কাজে নিজেদের প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করবে। তিনি বলেন, “আগের দলগুলো যেভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জনগণের প্রত্যাশা উপেক্ষা করেছে, নতুন দল তেমন হবে না।”

শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এবং দল গঠনের পরিকল্পনা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “দেশের জনগণ যদি মনে করে আমাদের একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন, আমরা অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করব।”

নতুন দলের সদস্য হিসেবে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দল হিসেবে অংশ নিতেও আগ্রহী।

নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ক্ষমতা নয়, বরং দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। যদি গণহত্যার বিচারের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে খুনিদের বিচারের বিষয়টি আমাদের প্রধান এজেন্ডা হবে।”

অর্থায়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দলের সম্ভাব্য অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা ক্রাউডফান্ডিং পদ্ধতির ওপর নির্ভর করব। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন ফোরামের অর্থায়ন ব্যবস্থা নিয়েও গবেষণা করছি।”

নতুন দলটি নির্বাচনী লড়াইয়ে যেকোনো ফলাফল গ্রহণ করলেও তাদের বিপ্লবী চেতনা ধরে রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ছাত্রনেতারা। নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী আরও জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যান্য দলের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জোটে যোগ দিতেও প্রস্তুত।

এটি স্পষ্ট যে, নতুন দলটি দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে একটি স্বচ্ছ, জনমুখী এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করতে কাজ করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *